গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকায় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। রেললাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বন্ধ হয়ে পড়েছে রেল যোগাযোগ। তলিয়ে গেছে প্রশাসনিক কার্যালয়সহ পুরো গাইবান্ধা শহর।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকে ত্রিমোহিনী স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রেললাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুরের সাথে ঢাকাগামী রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, শহরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় জেলা প্রশাসক ও জজের বাসভবন, পিকে বিশ্বাস রোড, স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ, সান্তার পট্টি রোড, টেনিস কমপ্লেক্স, ডেভিড কোম্পানীপাড়া, ভিএইড রোড, মুন্সিপাড়া, ব্রীজ রোড কালিবাড়িপাড়া, কুটিপাড়া, পূর্বপাড়া, সবুজপাড়া, পুরাতন বাজার, বানিয়ারজান, পুলিশ লাইন, নশরৎপুর, বোয়ালীসহ আশেপাশের এলাকায় প্লাবিত হয়েছে।
বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার খলিলুর রহমান জানান, বিভিন্ন স্থানে রেল লাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই ট্রেনের যাত্রা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি পার্বতীপুর হয়ে চলাচল করবে।
গাইবান্ধা পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির মিলন জানান, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্তদের জন্য ১২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে খাদ্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।
এদিকে, বুধবার দুপুরে থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১৪৬ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি ৯০ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তিস্তার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান।
অন্যদিকে, ঘাঘট নদীর পানির তোড়ে সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের ফকিরপাড়া এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সুন্দরগঞ্জ-গাইবান্ধা সড়কে হাঁটুর উপরে উঠায় যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে মূল শহররক্ষা বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মীরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও সাঘাটা উপজেলায় যমুনা নদীর পানির তোড়ে ভরতখালীর ২নং ক্রস বাঁধ ধসে অনেক এলাকায় পানি উঠেছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ২৩০টি গ্রামের ৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৯ হাজার ২৩০টি। বন্যা কবলিত মানুষের আশ্রয়ের জন্য ১১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে আশ্রয় নিয়েছেন ৪২ হাজার ১০২ জন। বন্যা কবলিত এলাকার রাস্তাঘাট সব ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে ৯২ কি.মি. কাঁচা রাস্তা, ৬টি কালভার্ট ও ৪ কিলোমিটার বাঁধ। অন্যদিকে ১ হাজার ২৪৬ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে গেছে। ৪কি.মি. বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩৩২টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
গাইবান্ধার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছা. রোখছানা বেগম জানান, এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ৪ উপজেলায় জেলা ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার কার্টুন শুকনা খাবার। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সেগুলো বিতরণের কাজ চলছে।