করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষা (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা (এইচএসসি) পেছাচ্ছে। গতকাল বুধবার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তির পুরো প্রক্রিয়া জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ‘ক্যাচমেন্ট (এলাকাভিত্তিক) কোটা’ ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। আর ক্লাস্টারভিত্তিক লটারিতে শিক্ষার্থীরা একটির বদলে এবার পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করার সুযোগ পাবে।

আগে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রেই শুধু লটারি হতো। ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো যথাক্রমে পিইসি ও জেএসসির ফলের ভিত্তিতে। অন্য শ্রেণিতে লিখিত পরীক্ষা হতো।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে আগের মতোই সরাসরি ভর্তি, অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা এবং সব শ্রেণিতেই লটারি—এই তিনটি প্রস্তাব এসেছিল। সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ঝুঁকি আমরা নিতে চাই না। দ্বিতীয়ত, অনলাইনে পরীক্ষায় সবার ইন্টারনেট সুবিধা নেই, আবার সংযোগেও সমস্যা আছে। তাই আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে সব শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে লটারিকেই যুক্তিযুক্ত মনে করেছি।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হলে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করা যাবে। আশা করি পূর্ণ স্বচ্ছতার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারব।’ চার্চ পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে বলে আশা করেন মন্ত্রী।

পেছাচ্ছে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা : করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘আগামী বছর যাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা, তাদের জন্য তিন মাসে শেষ করা যায় এমন একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আলোকে তাদের তিন মাস ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে আমরা তাদের তিন মাস ক্লাস করাতে চাই। এই কারণে হয়তো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দু-এক মাস পিছিয়ে যাবে।’

শিক্ষাপঞ্জি অনুসারে বেশ কয়েক বছর ধরে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি এবং ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে আসছে। ওই দিনগুলো সরকারি ছুটি থাকলে পরদিন থেকে এসব পরীক্ষা শুরু হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। তবে এসএসসি পরীক্ষা যেহেতু বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই এ ফল থেকে ৭৫ শতাংশ এবং জেএসসির ফল থেকে ২৫ শতাংশ নম্বরের ভিত্তিতে ফল প্রকাশের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে।’

সহসাই খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : করোনাভাইরাসের প্রকোপ না কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে বলেই মনে হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঠিক হবে না, স্বাস্থ্যবিধিও মানা যাবে না।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘শীতের প্রকোপ সাধারণত মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত থাকে। এর মধ্যে ভর্তিপ্রক্রিয়াও শেষ হয়ে যাবে। এরপর যদি করোনার প্রকোপ কমে যায়, তাহলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প পরিসরে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। তবে সব শ্রেণির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে আরো কিছু সময় দেরি হতে পারে।’

স্কুলে স্কুলে বই উৎসব হচ্ছে না : প্রতিবছর ১ জানুয়ারির বই উৎসব সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এবারও বছরের প্রথম দিন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই উৎসবের উদ্বোধন করবেন। তবে সারা দেশে বই উৎসব হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তির আহ্বান : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গুচ্ছ পরীক্ষা না হলে ভর্তীচ্ছুদের বিশাল ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেকে মসজিদে রাত কাটায়। আবার ছাত্রীদের সেই সুযোগও নেই। এর সঙ্গে আর্থিক ক্ষতি তো রয়েছেই। আর করোনার কারণে এটা সম্ভবই না।’