শহরের জ্যাম, গরম আর ধুলোবালির হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই যাত্রাপথে মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। কিন্তু এই মোটরসাইকেল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা থেকে যায়। শারীরিক নানা সমস্যা, বিশেষ করে কোমর ও মেরুদণ্ড ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে মোটরসাইকেল খুব বড় ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন অনেকে। আসলেই কি তাই? চলুন না, জেনে নেওয়া যাক-
মোটরসাইকেলের ধরণ:
মোট তিন রকমের মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। স্ট্যান্দার্ড, ক্রুজার এবং স্পোর্টসবাইক। এদের মধ্যে যেকোনো একটি আপনি বেছে নিতে পারেন। তবে তার আগে আপনাকে দেখতে হবে যে এদের যে ভিন্ন ভিন্ন বসার অবস্থান এবং আকৃতি, সেগুলোর মধ্যে কোনটির সাথে আপনার স্বাচ্ছন্দ্য বেশি যায়।
এদের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড মোটরসাইকেলে হাতের সাথে সমান্তরাল একটি অবস্থান বজায় রেখে বসা যায়। কনুই এবং কাঁধ সামনে বাড়তিভাবে এগিয়ে দিতে হয় না। আর এই অবস্থানের জন্যই ব্যাক পেইন দূর করার ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকরী। দূরের যাত্রায় এই বাইক বেশি আরামদায়ক।
ক্রুজার বাইকে বাকি সব ঠিক থাকলেও পায়ের পাতা একটু উঁচু করে রাখতে হয়। ফলে শরীরের পেছনে চাপ পড়ে। অন্যদিকে স্পোর্টস বাইক ব্যবহার করলে আপনার পুরো শরীরের উপরে বড় রকমের প্রভাব পড়বে।
মোটরসাইকেলের অংশগুলো:
মোটরসাইকেলের নানারকম অংশের ভিন্নতার কারণে এর প্রভাব কোমর ও মেরুদণ্ডে কম কিংবা বেশি পড়ে। এদিকে খেয়াল রাখলেই ব্যাক পেইন নিয়ে ভাবার কোনো কারণ থাকবে না। এই নির্দিষ্ট অংশগুলো হলো-
সিট
সাধারণত, মোটরসাইকেলে বসার আসন বা সিট ‘স্টক সিট’ হয়ে থাকে। আর এটি শরীরের জন্য খুব একটা সাহায্যকারী নয়। ভালো ফলাফল পেতে আপনি এই সিট নিজের মতো করে বদলে নিতে পারেন। একইসাথে সিটে বাড়তি কুশন লাগিয়ে আরো বেশি আরামদায়ক করে তুলতে পারেন।
পা রাখার স্থান
মোটরসাইকেলের পা রাখার স্থান কতটা আরামদায়ক সেটার উপরেও নির্ভর করে এর প্রভাব আপনার শরীরে কীভাবে পড়বে। ভালো ফল পেতে এমন মোটরসাইকেল ব্যবহার করুন যেটির ফুট পেগ রাইডারের থেকে বেশি দূরে নয়। এতে করে বাইক চালানোর সময়ে নিজেকে বাড়তি চাপ দিতে হবে না।
হ্যান্ডেলবার
অনেকসময় মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেল শরীরের সাথে সমান উচ্চতায় থাকে না। ফলে এটি চালানোর সময়ে পিঠে তুলনামূলকভাবে বেশি চাপ পড়ে। ব্যাক পেইনের অন্যতম একটি কারণও এটি।
মোটরসাইকেল চলাকালীন আঘাতের সম্ভাবনা কমাবেন কীভাবে?
মনে করুন, আপনার পিঠ অনেকগুলো হাড় দিয়ে তৈরি। যেখানে আছে বাড়তি কিছু পেশী এবং টেন্ডন। তো, এই স্থানে খুব বড় কোন আঘাত লাগলে তার প্রভাবে ব্যথা তো তৈরি হবেই। ঠিক সময়ে সচেতন না হলে এর প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদী কোন সমস্যাও তৈরি হতে পারে। কী করবেন এমন আঘাত এড়িয়ে চলতে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক-
শরীরচর্চা করুন
আপনি যদি সারাদিন অফিসে বসে থাকেন, এবং এরপর মোটরসাইকেলেও বসে থাকেন- তাহলে একটা সময় পর এর খুব বাজে প্রভাব আপনার মেরুদন্ডে পড়বেই। এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে দিনের একটা সময় একটু শরীরচর্চা করুন। এতে করে দ্রুত কোন আঘাত সহজে পাবেন না আপনি।
রিল্যাক্সে থাকুন
অনেকেই মোটরসাইকেলে চলার সময় শরীরের পেশীর উপরে বেশি ভার দিয়ে ফেলেন। অতিরিক্ত চাপ পড়ে এতে। চেষ্টা করুন মোটরসাইকেলে চলার সময় শান্তভাবে, রিল্যাক্সে চালাতে। এতে করে শরীরের উপরে অনেক বেশি চাপ পড়বে না।
ব্যাক ব্রেস পড়ুন
মোটরসাইকেলে চলার সময় নিরাপদে থাকতে এবং মেরুদণ্ডকে সুস্থ রাখতে ব্যাক ব্রেস পড়ুন। এতে করে পিঠের ব্যথা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন।
বর্তমানে অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, প্রতিদিনের জীবনে চলাচলের জন্য আমাদের মোটরসাইকেল না হলে চলে না। তাই, এক্ষেত্রে নিজের সুরক্ষার দিকে নজর দিন। মোটকথায়, চেষ্টা করুন এমন সবগুলো উপায় অবলম্বন করতে যেগুলো আপনাকে মোটরসাইকেলে চলার সময় স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা দেবে।