কাউছ মিয়া। ফাইল ছবি

গুলশান-বনানী কিংবা মতিঝিলের নামীদামী প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের পেছনে ফেলে আবারো দেশের সেরা করদাতা হয়েছেন হাকিমপুরী জর্দার স্বত্বাধিকারী কাউছ মিয়া। ২০১৯-২০ করবর্ষে ব্যবসায়ী শ্রেণিতে ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে এই ব্যবসায়ী সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন।

২০০৮ সাল থেকে তিনি দেশে ব্যবসায়ী শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতার একজন। অবশ্য অন্য শ্রেণির সর্বোচ্চ করদাতারা প্রতিবছর কর হিসেবে যত টাকা দেন, তাঁরা কাউছ মিয়ার ধারেকাছে নেই বলে জানিয়েছেন এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা।

পুরান ঢাকার আগা নওয়াব দেউড়ি রোডে হাকিমপুরী জর্দার কারখানার একটি কক্ষই তাঁর ‘চেম্বার’। মৌলভীবাজার থেকে সরু এই গলিপথ ধরে কিছুটা পথ হাঁটলেই তার কারখানা। সেখানেই বসেন তিনি। পুরান ঢাকার ঘুপচি গলির এই ব্যবসায়ীই প্রতিবছর সর্বোচ্চ করদাতা হন।

জাতীয় ট্যাক্সকার্ড নীতিমালা, ২০১০ (সংশোধিত) অনুযায়ী সম্প্রতি ২০১৯-২০ করবর্ষের জন্য সেরা করদাতা হিসেবে ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে ব্যক্তি শ্রেণিতে ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে কাউছ মিয়া ছাড়াও সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, মো. নুরুজ্জামান খান ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কামাল।

কাউছ মিয়া ৬১ বছর ধরে কর দিয়ে আসছেন। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দেন তিনি। কেন কর দেয়া শুরু করলেন, এর ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। এনবিআরের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আগে টাকাপয়সা এখানে-সেখানে রাখতাম। এতে নানা ঝামেলা ও ঝুঁকি থাকত। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দিয়ে ‘ফ্রি’ হয়ে গেলাম। এরপর সব টাকাপয়সা ব্যাংকে রাখতে শুরু করলাম। হিসাবনিকাশ পরিষ্কার করে রাখলাম। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১ নম্বর করদাতা হয়েছিলেন কাউছ মিয়া।

কাউছ মিয়ার বাবা চাইতেন না তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে নামেন। তার বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। আর ব্যবসায় মন পড়ে থাকা কাউছ মিয়া ১৯৪৫ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামায় আর পড়াশোনা এগোয়নি।

কাউছ মিয়া তার ব্যবসা শুরু করেছিলেন মাত্র আড়াই হাজার টাকা নিয়ে, পঞ্চাশের দশকে। বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারে মুদিদোকান দেন। এরপর ধীরে ধীরে ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট ছিলেন। পরের ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন এবং তামাকের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ৪০-৪৫ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি।

তবে তার মূল ব্যবসা তামাক বেচাকেনা। রংপুরে তামাক কিনে সেখানেই বিক্রি করেন। একবার তিনি আমদানির ব্যবসায় নামতে লাইসেন্স নিয়েছিলেন। এ ব্যবসায় কারসাজি না করলে টিকে থাকা মুশকিল, এটা চিন্তা করে আমদানির ব্যবসা ছাড়েন। বর্তমানে নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্য বেশ কিছু কার্গো জাহাজ আছে কাউছ মিয়ার। এই ব্যবসা তার ছেলেরা দেখাশোনা করেন।

প্রথমে একটা ছোট কারখানা দিয়ে বাজারে ছাড়লেন ‘শান্তিপুরী জর্দা’, পরে সেটা নকল হতে থাকায় নতুন করে চালু করলেন ‘হাকিমপুরী জর্দা’ এই নাম দিয়ে, ১৯৯৬ সাল থেকে ব্যবসা করছেন তিনি।

কাউছ মিয়া বলছিলেন, ‘শান্তিপুর’ বা ‘হাকিমপুর’ এসব নামকরণের পেছনে বিশেষ কোন কারণ নেই। তবে হাকিমপুর নামটা লোকের মুখে সহজে আসে, সহজে বলতে পারে – এ জন্যই এই নাম রাখা।