গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের পরিচয় এবং রাস্তার বের হবার কারণ জিজ্ঞেস করছে পুলিশ।

করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা ও সংক্রমণ রোধে আজ থেকে দেশজুড়ে ৮ দিনের ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়েছে। জনগণকে লকডাউন মানাতেও যথেষ্ট তৎপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের পরিচয় এবং রাস্তার বের হবার কারণ জিজ্ঞেস করছে পুলিশ।


বুধবার (১৪ এপ্রিল) রমজানের শুরুর দিনে কঠোর লকডাউনে বাড়ির বাইরে বের হলেই পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তাই নানা ছুতোয় ঘর থেকে বের হয়ে পার পাচ্ছে না কেউ।

রাস্তায় রাস্তায় দেখা যাচ্ছে পুলিশের চেকপোস্ট। এই চেকপোস্ট অতিক্রম করে কেউ যেতে পারছেন না। সবাইকে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে পার হতে হচ্ছে। ‘মুভমেন্ট পাস’ ছাড়া কাউকে চেকপোস্ট অতিক্রম করতে দিচ্ছে না পুলিশ।

গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের পরিচয় এবং রাস্তার বের হবার কারণ জিজ্ঞেস করছে পুলিশ।


রাজধানী ঢাকার সড়কে খুব কম মানুষকে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। দেখা যায়নি গণপরিবহন। কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন চললেও সেটা খুবই নগন্য। গতবার সড়কে চোখে পড়ার মতো রিকশা চলাচল করতে দেখা গেলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। রিকশার সংখ্যাও হাতে গোনা।

রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) এস এম শামীম বলেন, ‘জনগণের চলাচল নিয়ন্ত্রণে সরকারি নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে পুলিশ রাজপথে কাজ শুরু করেছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেকপোস্ট এলেই তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে এবং মুভমেন্ট পাস আছে কি-না চেক করা হচ্ছে। মুভমেন্ট পাস না থাকলে অনেকেকই আটকে দেওয়া হচ্ছে’।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ধোলাইপাড় এলাকায় ভ্যানে করে যাচ্ছিলেন কয়েকজন নারী-পুরুষ। এ সময় মোটরসাইকেলের টহলরত দুজন পুলিশ সদস্য তাদের থামিয়ে জানতে চাইলেন বাইরে বের হয়েছেন কেন, কোথায় যাচ্ছেন? কেউ হাসপাতলে, কেউ বাজারে যাচ্ছেন বলে জানান তারা। এ সময় মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা কনেস্টবলকে বলতে শোনা যায়- ‘লকডাউনে আপনারা বাইরে যাবেন, বাজার করবেন, ঘুরতে বের হবেন আর আমাদের কষ্ট করতে হবে’।

তার একটু পর ধোলাইপাড় টং মার্কেট এলাকায় দেখা যায় মোড়ে পুলিশ এবং রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উৎসুক জনতা গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে দেখছে পুলিশের কার্যক্রম। তবে সড়কে নামলেই পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে।

সকাল ১০টার দিকে ইংলিশ রোড এবং রায়সাহেব বাজার মোড়ে পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। যানবাহন বন্ধ থাকায় মানুষ রিকশায় করে প্রয়োজনীয় কাজে যাচ্ছে। পুলিশ তাদের থামিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন। কিন্তু সদুত্তর না পাওয়ায় অনেককেই রিকশা থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের চলাচল সীমিত করতে এই মোড়েও দুটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশি অবস্থান ছাড়াও পুলিশি টহল এবং মোবাইল কোর্ট লকডাউনে তৎপর রয়েছে। সোয়া ১০টার দিকে ইংলিশ রোড এলাকায় মোবাইল কোট টহল দিতে দেখা যায়। বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন, ওপরের নির্দেশে তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন। উদ্দেশ্য একটাই, করোনা সংক্রমণ যাতে না বাড়ে।

যেভাবে পাওয়া যাবে ‘মুভমেন্ট পাস’

movementpass.police.gov.bd এর ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাস সংগ্রহ করতে পারবেন যে কেউ। তবে প্রতিটি পাস একবারই ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ যাওয়া-আসার জন্য আলাদা আলাদা পাস সংগ্রহ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, যার জন্য পাসটি দরকার সেই ব্যক্তির নাম, মোবাইল ফোন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র বা ড্রাইভিং লাইসেন্স, যে স্থানে যাচ্ছেন সে জায়গার নাম, যেখান থেকে যাবেন সেই স্থানের নাম ও যাত্রার কারণ ইত্যাদি তথ্য পূরণ করে উল্লেখিত লিংকে আবেদনের পর পুলিশ অনলাইনে কিউআর কোড স্ক্যানারসহ একটি পাস ইস্যু করবে। এই কোডটি স্ক্যান করেই চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা আবেদনকারীর তথ্য ও যাত্রার কারণ নিশ্চিত করবেন।

তবে চলাচলের পাস প্রদানের জন্য একটি বিশেষ অ্যাপও চালু করেছে পুলিশ। যেটি ব্যবহার করে জরুরি প্রয়োজনে পাস পাবেন যে কোনো ব্যক্তি।