মাহফুজ বাবু


অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে গোমতীর বালু-মাটিখেকোরা নদী গিলে খাওয়ার পর চরের কৃষি জমিও খেয়ে শেষ করছে। গোমতীর কুমিল্লা অংশের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর বেশিরভাগ স্থানেই চরের কৃষি জমি এখন ক্ষতবিক্ষত ড্রজার, ভেকু আর কোদালের আঘাতে।


তবে কুমিল্লার গোমতী নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় দীর্ঘদিন পর অবশেষে বালুমহাল ইজারা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। গত বাংলা সনের ৩০চৈত্রের পর বৈধ বালুমহালগুলোর ইজারার শেষ হয়। এরপর আর নতুন করে এবছর সরকারিভাবে বালুমহাল ইজারা না দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করে প্রশাসন। ইজারা না থাকলেও আইন ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আগের মতই দিনে রাতে দেদারছে গোমতী চরের মাটি কাটছে মাটিখেকো সিন্ডিকেট। বিশেষ করে আদর্শ সদরের টিক্কারচর থেকে গোলাবাড়ি সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪০-৫০ টি স্পটে দিনেরাতে গোমতী হেক্টরের পর হেক্টর উর্বর ফসলী জমি উজার করে কেটে নেয়া হচ্ছে মাটি। জোর করে কিংবা জমির মালিক কে সামান্য টাকা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও কর্মী সমর্থক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ অবৈধ মাটিকাটা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অসহায় চরের কৃষকরা। মাটিকাটা সিন্ডিকেটের ভয়ে অভিযোগ ও করতে পারছেন না দিশেহারা চরের কৃষকরা। অভিযোগ রয়েছে ইজারা না থাকলেও সদর উপজেলার টিক্কারচর সংরাইশ জালুয়াপাড়া অরণ্যপুর গোলাবাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক স্পষ্ট থেকে কোটি টাকার মাটি বিক্রি হচ্ছে দৈনিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীদের অনেকে দাবী করেন, ইজারা না থাকলেও বিভিন্ন মহলকে ম্যনেজ করেই তারা চরের মাটি কাটছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গোমতীতে এখন উত্তোলন করে বিক্রি করার মতো বালু নেই। যার কারণে মাটিখেকোরা এখন কৃষি জমির মাটি লোপাট করছে। চলমান ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে হাইকোর্টে একটি অগৃহীত পিটিশন দায়েরের বাহানায় দিয়ে মাটি কাটছে মাটিখেকো সিন্ডিকেট। বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে গোমতী নদীতে হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে করা হবে। সার্ভেতে নদীতে বালু না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলে আগামীতে গোমতীর বালুমহাল ইজারা বাতিল করা হবে। সেজন্যই এবছর নতুন করে বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়নি।
গত ২০শে মার্চ থেকে গোমতী নদী ও নদীর চরের কৃষি জমি রক্ষায় দিন-রাত অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন। গোমতী রক্ষায় মাসব্যাপী ২৪ ঘণ্টা অভিযান পরিচালনা করে আটক করা হয় অনেককে জব্দ করা হয় মাটিবাহী গাড়ি ভেকু ড্রেজার সহ মাটিকাটা সরঞ্জাম। এতে অনেকটাই কমে আসে মাটি কাটা।

তবে সম্প্রতি আবারো মাটিকাটা সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের ব্যস্ততা ও বেখেয়ালে আবারো নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে চরের মাটিকাটা। বিষটি নজরে এলে গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলামের সার্বিক নির্দেশনায় গোমতী চরের ৩টি স্পটে অভিযান চালিয়ে ৭টি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করা হয়। জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আশীক উন নবী তালুকদার ও অতীশ সরকারের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সহায়তায় অভিযানটি পরিচালিত হয়। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে পরিচালিত এ অভিযানেঅবৈধ ভাবে মাটি কাটার অপরাধে পালপাড়া এলাকার ভুইয়াবাড়ি ঘাটের ৪টি, আড়াইওড়া পালপাড়া এলাকায় ২টি এবং আলেখারচর এলাকায়১টি সহ মোট ৭টি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করা হয় এবং ড্রেজারের বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আবু সাইদ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, গোমতী নদী আমাদের কুমিল্লা তথা দেশের সম্পদ। গোমতীর অস্তিত্ব রক্ষার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।
চলমান অভিযানকে আমরা সাবাই স্বাগত জানাই। তবে এই অভিযানকে সফল করতে হলে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের ক্ষমতার ঊর্ধ্বে থেকে প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। আমরাও চাই বালুমহাল ইজারার নামে গোমতী ধ্বংস বন্ধ হোক। এই ইজারা গোমতীর জন্য ‘বিষফোড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান সরেজমিনে দিনে ও রাতের বেলায় গোমতীর মাটি উত্তোলনের দৃশ্য দেখার পর এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। স্যারের নির্দেশনায় গোমতী ও চরের কৃষি জমি রক্ষায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাব।