পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে। প্রতি বছর সরকারের সাধারণ ছুটিসহ ধর্মীয় ও ঐচ্ছিক ছুটিগুলো নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রিসভায় চুড়ান্ত করা হয়। এবারো গত ২ নভেম্বর ঈদের ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩, ১৪ ও ১৫ মে। আর ১৬ মে সরকারি কর্মচারীরা ঐচ্ছিক ছুটি কাটাতে পারবেন।

এদিকে, ঈদের ছুটি আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে- এরকম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল প্ল্যাটফরমে। এতে সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীসহ অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৩ বা ১৪ মে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। অর্থাৎ রোজা ২৯ দিনে হলে ঈদের পরের দুইদিন ছুটি, যদিও ওই দুইদিনই শুক্র ও শনিবার। আর রোজা ৩০ দিনে হলে ঈদের আগে এবং পরে দুই দিনের ছুটি। অর্থাৎ ঈদ যেদিনই হোক ছুটি তিন দিন। যদিও চলমান লকডাউনের সীমা ১৬ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে সরকার।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের উপসচিব কাজী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদের ছুটি ১৩ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত। এটা অনেক আগে থেকেই ঘোষিত। এখানে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কিছু নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোজা ২৯ দিনে শেষ হলেও ছুটির কোনো পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ বুধবার অফিস শেষে বৃহস্পতিবার থেকে ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে।

শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও যাতে তিন দিনের বেশি ছুটি না দেয় সে বিষয়েও নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গত ৩ মে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঈদুল ফিতরকে ঘিরে কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মীদের সরকারি তিন দিনের অতিরিক্ত ছুটি না দিতে বলেছে। ওই দিনের মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ঈদে তিন দিনের বাইরে কোনো ছুটি দেওয়া হবে না। গার্মেন্টস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও তিন দিনের বেশি ছুটি দিতে পারবে না। তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যদি গত কয়েকদিন যাবৎ গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা বাড়তি ছুটির জন্য আন্দোলন করছে। কিছু প্রতিষ্ঠান বাড়তি ছুটি মঞ্জুর করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো নতুন নির্দেশনা মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত আসেনি।

চলতি বছরের যত সরকারি ছুটি : এ  বছরে মোট ২২ দিন সরকারি ছুটি ভোগ করছে বাংলাদেশ, যার মধ্যে সাত দিন পড়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত ২ নভেম্বর ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে ২০২১ সালের ছুটির তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের জন্য ১৪ দিন সাধারণ ছুটি এবং নির্বাহী আদেশে আট দিন সরকারি ছুটি মিলিয়ে মোট ২২ দিন ছুটি থাকবে। এর মধ্যে সাত দিনের ছুটি শুক্রবার ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পড়েছে।

 নির্বাহী আদেশে ছুটি : ২৯ মার্চ শবে বরাত, ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ, ১০ মে শবে কদর, ১৩ ও ১৫ মে ঈদুল ফিতরের আগে ও পরের দিন, ২২ ও ২২ জুলাই ঈদুল আজহার আগে ও পরের দিন এবং ১৯ অগাস্ট আশুরা।

সাধারণ ছুটি : ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ১ মে আন্তর্জাতিক মে দিবস, ৭ মে জুমাতুল বিদা, ১৪ মে ঈদুল ফিতর, ২৬ মে বুদ্ধপূর্ণিমা, ২১ জুলাই ঈদুল আজহা, ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস, ৩০ অগাস্ট জন্মাষ্টমী, ১৫ অক্টোবর দুর্গাপূজা (বিজয়া দশমী), ১৯ অক্টোবর ঈদে মিলাদুন্নবী, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং ২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন (বড়দিন)।

ঐচ্ছিক ছুটি : সাধারণ ছুটি, নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে যুক্ত করে ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করা যায়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, একজন কর্মচারক তার নিজ ধর্ম অনুযায়ী বছরে সর্বোচ্চ তিন দিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করতে পারেন। এ জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে বছরের শুরুতে নিজ ধর্ম অনুযায়ী নির্ধারিত তিন দিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। যে সব অফিসের সময়সূচি ও ছুটি তাদের নিজস্ব আইন-কানুন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। যেসব অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের চাকরি সরকার অত্যাবশ্যক হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আইন-কানুন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে এই ছুটি ষোষণা করবে।

মুসলিম পর্ব: ১২ মার্চ শবে মেরাজ, ১৬ মে ঈদুল ফিতর (ঈদের পরের দ্বিতীয় দিন), ২৩ জুলাই ঈদুল আজহা (ঈদের পরের দ্বিতীয় দিন), ৬ অক্টোবর আখেরি চাহার সোম্বা এবং ১৭ নভেম্বর ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহাম। হিন্দু পর্ব: ১৬ ফেব্র“য়ারি সরস্বতী পূজা, ১১ মার্চ শিবরাত্রি ব্রত, ২৮ মার্চ দোলযাত্রা, ৯ এপ্রিল হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব, ৬ অক্টোবর মহালয়া, ১৪ অক্টোবর দুর্গাপূজা (নবমী), ২০ অক্টোবর লক্ষ্মীপূজা এবং ৪ নভেম্বর শ্যামাপূজা।  খ্রিস্টান পর্ব: ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ, ১৭ ফেব্র“য়ারি ভস্ম বুধবার, ১ এপ্রিল পূণ্য বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল পূণ্য শুক্রবার, ৩ এপ্রিল পূণ্য শনিবার, ৪ এপ্রিল ইস্টার সানডে এবং ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব (বড়দিনের আগে ও পরের দিন)। বৌদ্ধ পর্ব: ২৮ জানুয়ারি মাঘী পূর্ণিমা, ১৩ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তি, ২৩ জুলাই আষাঢ়ী পূর্ণিমা, ২০ সেপ্টেম্বর মধু পূর্ণিমা (ভাদ্র পূর্ণিমা) এবং ২০ অক্টোবর প্রবারণা পূর্ণিমা (আশ্বিনী পূর্ণিমা)।

পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা ও এর বাইরে কর্মরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কর্মচারীদের জন্য ঐচ্ছিক ছুটি: ১২ ও ১৫ এপ্রিল বৈসাবি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর অনুরূপ সামাজিক উৎসব।