ফেসবুকে পরিচয় গোপন করে কলেজছাত্রীর সঙ্গে প্রেম করেন সাকিব। এরপর গোপনে বিয়ে করেন দুজন। কলেজছাত্রী নাজনীনকে (১৯) বিয়ের করার সময়ও সাকিব তার বাবার পেশা ভ্যানচালক বিষয়টি লুকায়। বিয়ের পর সবকিছু জেনে নাজনীন বিষয়টি গোপন করার কারণ জানতে চায়। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে নাজনীন তার স্বামী সাকিবকে ‘ভিক্ষুকের ছেলে’ বলে গালি দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনীনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন সাকিব। এরপর বাড়ির পাশের একটি সেপটিক ট্যাংকিতে লাশ ফেলে বগুড়া ফিরে সাকিব তার নিজ কর্মস্থলে যোগ দেন।
পুলিশের হাতে আটকের পর স্ত্রীকে হত্যার এ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বগুড়ার জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত সাকিব হোসেন হাওলাদার (২৪)। তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুল করিম হাওলাদারের ছেলে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব জানায়, শ্বাসরোধে হত্যার পর বাটাজোরের হরহর গ্রামের তার বাবার ভাড়াটিয়া বাসার পাশের সেপটিক ট্যাংকিতে স্ত্রী নাজনীন আক্তারের মৃতদেহ গুম করা হয়েছে।
তার দেওয়া তথ্য মতে, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সেফটি ট্যাংকিতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নাজনীন আক্তারের মৃতদেহের কোনো সন্ধান মেলেনি। সেপটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে নাজনীন আক্তারের ওড়না, শরীরের চামড়ার কিছু অংশ ও হাতের দুটি নক পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত নাজনীন আক্তার বগুড়া সদরের সাবগ্রাম (উত্তরপাড়া) এলাকার মো. আব্দুল লতিফের মেয়ে। তিনি বগুড়ার গাবতলী সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।
পুলিশ জানায়, নাজনীন আক্তার গত ২৪ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় গত ২৬ মে তার বাবা আব্দুল লতিফ বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ সোমবার সাকিবকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন।
সাধারণ ডায়েরি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নোটারীর মাধ্যমে সাকিবের সাথে নাজনীনের বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর নাজনীন তার বাবা-মায়ের সাথে থাকতেন। গত ২৪ মে সাকিব তার স্ত্রী নাজনীনকে ফোন দিয়ে বলেন, তার (সাকিব) বাবা খুবই অসুস্থ। তাই অসুস্থ বাবাকে দেখতে নাজনীনকে তার গৌরনদীর বাসায় যেতে হবে।
সাকিব নাজনীনকে গোদাপাড়া চারমাথা বাসস্ট্যান্ডে দ্রুত আসতে বলেন। এরপর নাজনীন তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সেখানে যায়। এরপর বাসে করে তারা গৌরনদীর উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর নাজনীনের সঙ্গে তার বাবা-মায়ের আর যোগাযোগ হয়নি। পরবর্তীতে বাবা-মা নাজনীন ও সাকিবের মোবাইল নম্বরে কল করলে দুটি নাম্বরই বন্ধ পান। এ ঘটনা উল্লেখ করে আব্দুল লতিফ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামান জানান, সকালে সাকিবকে সাথে নিয়ে বগুড়া সদর থানা পুলিশের একটি দল গৌরনদীতে আসেন। এরপর গৌরনদী মডেল থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তারা নাজনীনের মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে যান। তবে আগেই এ খবর পেয়ে সাকিবের বাবা-মা সেখান থেকে আত্মগোপন করে।
তিনি আরো বলেন, সকাল ১০টায় প্রথমে সেপটিক ট্যাংকি পরিস্কার করে তারমধ্যে তল্লাশী করা হয়। সেপটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে নাজনীন আক্তারের পরিধেয় ওড়না, শরীরের চামড়ার কিছু অংশ ও হাতের দুটি নখ উদ্ধার করা হলেও মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বাড়ির আশেপাশের নির্জন তিনটি স্থানে এবং একটি পুকুরে জাল ফেলে তল্লাশি চালিয়েও মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত।