মোঃ ইমন হোসেন,

আজকাল ট্রান্সজেন্ডার বলে একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষকে আর পিছনে ফেলে রাখা যাবে না। সম্প্রতি বেশ কিছু তৃতীয় লিঙ্গের নারীর প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ঘটনা আমাদের সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়। সম্প্রতি আমরা তাসনুভা আনান শিশিরের কথা জেনেছি যিনি এখন বেসরকারি চ্যানেল বৈশাখী টিভিতে সংবাদ পাঠক হিসেবে কাজ করেছেন। আজ আমরা রানী চৌধুরীর কথা বলবো।

রানী বিটিভিতে তালিকাভুক্ত উপস্থাপিকা ও নৃত্যশিল্পী। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিক মোঃ ইমন হোসেন এর কাছে তুলে ধরেছেন নিজস্ব মতামত আর স্বপ্নের কথা। একান্ত সাক্ষাৎকারে রানী বলেন, আমাদের লিঙ্গ পরিচয়ের তুলনায় যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। কৈশোরে বিদ্বেষ, ঘৃণা, হয়রানির শিকার হয়েছি। কিন্তু হাল ছাড়িনি। শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। “কেবল খবর পড়েই থেমে যেতে চাননা এই মানুষটি। তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান জাতীয় সংসদেও। সংসদ সদস্য পদের জন্য নমিনেশন পত্র পাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ট্রান্সজেন্ডাররা অবহেলিত।

এই একটা পরিচয়ের কারণে তারা সমাজ ও পরিবার ছাড়া। তাই তাদের সবাইকে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। আমি আমাদের প্রতিবন্ধকতাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করবো” রানী চ্যানেল আই, বাংলাভিশন, মাইটিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেলে নৃত্যের পাশাপাশি উপস্থাপনাও করছেন তিনি। রানী বলেন, আমার খুব বড় একটা ইচ্ছা আছে। আমি বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে রিয়েলিটি শো করবো। এর মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডাররা আন্তর্জাতিকভাবে ভূমিকা রাখবে। তাদের সমাজের সাথে একই কাতারে নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি। সেই রিয়েলিটি শোর মাধ্যমে আমরা সমাজকে খুব ভালো একটা কিছু উপহার দিতে পারবো।

এই জনগোষ্ঠীও যে পিছিয়ে নেই তা দেখানোর সুযোগ ঘটবে। রাষ্ট্র, সমাজ অনুধাবন করতে পারবে এই জনগোষ্ঠীর লোকজনও ভালো কাজ করতে পারে। ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের লিঙ্গ বৈষম্যের প্রচলিত প্রথা ভাঙতে পারছি এটা আমার জন্য একটা বড় প্রাপ্তি। আমি বিশ্বাস করি নিজের যোগ্যতাবলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়।’, বলছিলেন রানী। তিনি মনে করেন, যোগ্যতা ও গুণের দ্বারাই তিনি নাচ করার পাশাপাশি বিশ্বরঙসহ দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডের মডেল হিসেবেও কাজ করছেন । তিনি ছোটবেলা থেকেই বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশনে নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। হার্নেট টেলিভিশনের যাত্রা শুরু থেকেই সেখানে কাজ করছেন।

মাত্র ৮ বছর বয়সে পড়াশোনার পাশাপাশি নৃত্যশিল্পের ওপর বাংলা একাডেমি অব ফাইনেন্স থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১০ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। এছাড়া রানী বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে নাচের ওপর চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইনেন্সে নাচের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। রানী বেশ কয়েক বছর ধরে নাচের শিক্ষক হিসেবেও কাজ করছেন। পাশাপাশি ডান্স কোরিওগ্রাফার হিসেবেও কাজ করছেন। এ সম্পর্কে রানী বলেন, প্রথমদিকে অনেক কষ্ট হচ্ছিলো, কারণ আমাকে কেউ মেনে নিতে পারছিলো না। কিন্তু আমি নিজের যোগ্যতা দিয়ে আজকে প্রমাণ করে দিয়েছি যে আমরা কেউ পিছিয়ে নেই। আমরাও পারি। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি নিজের শরীরে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। মেয়েদের মতো সাজতে ও তাদের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করেন তিনি।

২০১৮ সালে রূপান্তরিত হয়ে তার নাম রাখা হয় রানী চৌধুরী। রানী আরও বলেন, এখনও শিক্ষিত সমাজ ট্রান্সজেন্ডার বুঝেন না। হিজড়া, তৃতীয়লিঙ্গ আর আমরা এক নই। আমরা যতো এই ধরনের কাজগুলোতে যুক্ত হবো ততোই আমাদের অস্তিত্ব জানবেন সকলে। পরিচয়হীন থাকতে হবে না। ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় নিয়ে রানীর নিজস্ব ভাবনা আছে। টিভি কিংবা সিনেমায় অফার এলে রানী অভিনয় করবেন কিনা এর উত্তরে রানী বলেন, যেহেতু আমি নৃত্যশিল্পী সেহেতু আমি ছোট ও বড় পর্দা সবকিছুতে কাজ করতে পারবো।

মিডিয়ায় হয়রানি বলে নানা গুঞ্জন রয়েছে। সে রকম ঘটনার মুখোমুখি হবার অভিজ্ঞতা আছে কিনা জানতে রানী হেসে বলেন, আমি আসলে মিডিয়ার সাথে খুব কম কথা বলতাম। মিডিয়াতে যদি হয় একরকম ওরা প্রচার করে আরেকরকম। সেজন্য এ বিষয়গুলো নিয়ে আমি কোনো কথা বলতাম না। কিন্তু এখন আমার সে ভুল অনেকটা ভেঙেছে।

এখন আমি মিডিয়ার সকলের সাথে কথা বলছি, যোগাযোগ রাখছি। আজ আমি যেটুকু সফলতা পেয়েছি সেটা মিডিয়ার কল্যাণেই।