করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিন চলছে আজ। আগের দিনগুলোর তুলনায় আজ রাস্তায় বেশি মানুষের চলাচল দেখা যাচ্ছে। রাস্তায় চেকপোস্টের সংখ্যাও তুলনামূলক কম। তল্লাশি বা টহলের সংখ্যাও কমেছে।

গত ১ জুলাই সাত দিনব্যাপী কঠোর লকডাউন চলমান থাকা অবস্থায় করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটলে গতকাল সোমবার নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সময়সীমা আরো সাত দিন বাড়িয়েছে সরকার।

লকডাউনের শুরু থেকেই বাস্তবায়নে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযৌক্তিক কারণে বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত গ্রেপ্তার ও জরিমানা করছেন। এ ছাড়া জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা পরিচয়পত্র দেখানো ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তল্লাশির সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে তারা তাদের গন্তব্যে বা কর্মস্থলে যেতে পারছেন।

এদিকে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও দোকান খোলা রাখতে চান দোকান ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। সোমবার (৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো খোলা চিঠিতে কল্যাণ সমিতি বলেছে, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে অল্প সময়ের জন্য হলেও দোকান খুলে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ প্রদান করে বাধিত করবেন।

লকডাউনের মধ্যে গতকালের মতো আজও খোলা রয়েছে ব্যাংক, বীমা এবং শেয়ারবাজার। তবে লেনদেন হচ্ছে সীমিত পরিসরে। ব্যাংক লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। শেয়ারবাজার ১০টা থেকে ১টা এবং বীমা ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের নির্দেশনা জারি করে সরকার। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে মাস্ক পরে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার কথাও বলা হয় নির্দেশনায়। বন্ধ রয়েছে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস। ৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে কঠোর লকডাউন।

এর আগে গত ৩০ জুন দেশজুড়ে সাত দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে ২১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুন এই নির্দেশনা অনুযায়ী সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) সব যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে অ্যাম্বুল্যান্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজের জন্য শুধু যানবাহন চলাচল করতে পারবে। গণমাধ্যম এই বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

২১ দফা নির্দেশনা

১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।

২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে। 

৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে। 

৪. সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। 

৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। 

৮. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে। 

৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। 

১০. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র ও স্থল) এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিস এই নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

১১. শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।

১২. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

১৩. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৪. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।

১৫. খাবারের দোকান, হোটেল সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেক ওয়ে) করতে পারবে।

১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে।

১৭. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

১৯. ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয়সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার নিয়োগ এবং টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে, বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।

২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

২১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।