নিজস্ব প্রতিবেদন:
দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথকে দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের কবল থেকে রক্ষার দাবি জানিয়েছে প্রটেকশন ফর লিগ্যাল হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য এমএ কাসেমের নানা অনিয়মের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়েরের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে প্রটেকশন ফর লিগ্যাল হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফি সাগর সামস এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু করা নর্থ সাউথ দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি বিশ্বিবদ্যালয় হলেও পরিচালনা পর্ষদে দুয়েকজন ব্যক্তির কারণে ডুবতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি। নর্থ সাউথ বিশ্বিবদ্যালয় (এনএসইউ) পরিচালিত হয় একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে। এই ট্রাস্টি বোর্ড একটি মানবহিতৈষী, দানশীল, জনহিতকর, অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আজিম উদ্দিন আহমেদ ও এমএ কাসেম মানবহিতৈষী ও অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটিকে বেআইনীভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপদান করে শতশত কোটি টাকা বাণিজ্য করছেন এবং সেই টাকা উভয়ে অপযোগসাজেশ করে আত্মসাৎ করেছেন এবং এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
ড. সাগর সামস বলেন, রাষ্ট্রের স্বার্থে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে এমন লাগামহীন দুর্নীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়টিকে জঙ্গি তৈরির কারখানায় রূপায়িত করা দুই ট্রাস্ট্রি আজিম উদ্দিন ও এমএ কাসেমের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির হাত থেকে প্রতিষ্ঠান ও দেশকে বাঁচানোর দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সুফী সাগর সামস নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই ট্রাস্টির দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আশালয় হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাত; ২০১৯ সালে বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় করে ২১ কোটি টাকা অপব্যয় ও আত্মসাত; বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এর অনুমোদনের বাইরে দশটি সেকশন চালু করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তিপূর্বক বিশাল অংকের টাকা বানিজ্য করেন এবং এই টাকা বিভিন্নভাবে আত্মসাৎকরেন; ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহানসহ আজিম-কাসেম সিন্ডিকেট পরস্পর যোগসাজশ করে সাধারণ তহবিল থেকে বেআইনীভাবে ১১৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ; পরিবারের সদস্যসহ বিদেশ ভ্রমণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় কোটি টাকা অপব্যয় ও আত্মসাৎ; সিটিং অ্যালাউন্স বাবদ ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ গাড়ি চালক ও জ্বালানী বাবদ ৪৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে শিক্ষার্থীদের দেওয়া টিউশন ফির অর্থ থেকে ভাতা বাবদ প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় আজিম উদ্দিন ও এমএ কাসেম সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার তথ্য উপস্থাপন করে এমএ কাসেম ও আজিম উদ্দিনকে দায়ী করা হয়। দেশে ঘটে যাওয়া নানা জঙ্গি হামলার ঘটনায় নর্থ সাউথের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রদের জড়িত থাকার প্রমাণ তুলে ধরা হয়।
এ সময় তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব তদন্ত করে দেখার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি তদন্তের স্বার্থে তদন্ত চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড থেকে তাদের অব্যহতি প্রদান করে নতুন পরিচালনা পর্ষদ সাজানোর দাবি জানানো হয়। মূলত রাষ্ট্রীয় স্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে মানবাধিকারকর্মী সুফী সাগর শামস গণমাধ্যমের কাছে এসব তুলে ধরেন।
এদিকে দুদকে জমা দেয়া এই চিঠিটির অনুলিপি পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইউজিসি চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যের পাশাপাশি সুফী সাগর সামস এই বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্র পত্রিকায় ছাপা হওয়া সংবাদের কপি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।