মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি।

কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ছুপুয়া রাস্তার মাথায় অবস্থিত রপ্তানিমুখী বাণিজ্যিক শিল্প কারখানা এ প্লাস গ্রুপের আমির শার্ট লিমিটেড এ দীর্ঘ আট বছর ধরে চলছে অসহায় শ্রমিকদের উপর নানারকম অমানবিক নির্যাতন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকার কিছু দুষ্ট প্রকৃতির মানুষের পরোক্ষ সহযোগিতায় মালিক পক্ষ, ম্যানেজমেন্ট এবং বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এর স্টাফরা অসহায় শ্রমিকদেরকে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করে চলছে দিনের পর দিন। আশেপাশে কোন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বা ফেডারেশন না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এ নির্যাতন মাথা পেতে সহ্য করে যাচ্ছে শ্রমিকরা। ঢাকা এপ্লাস গ্রুপের আমির শার্ট লিমিটেড গ্রামাঞ্চলে হওয়ার কারণে, অথবা আশেপাশে অন্য কোন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির না থাকার কারণে এখানকার অনেক শ্রমিক জানে না তাদের ন্যায্য অধিকার সম্বন্ধে।

অল্প হোক বেশি হোক যা পাচ্ছে তা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। বিন্দুমাত্র ধারণা নেই তাদের শ্রমিক আইন সম্বন্ধে। এই সুযোগে মালিক কর্তৃপক্ষ শ্রমিক আইন না মেনে অসহায় শ্রমিকদেরকে দিচ্ছে না তাদের ন্যায্য অধিকার। একদিনের জন্য ৩ দিনের হাজিরা কর্তন বা চাকরি থেকে বের করে দিচ্ছে।ঠিকমতো ওভার টাইম দিচ্ছে না। সরকারি ছুটির দিনেও (শুক্রবার) ছুটি নেই। তাদের টার্গেট ফিলাপ করার উদ্দেশ্যে টানা ডিউটি করতে হচ্ছে শ্রমিকদের, যেখানে কোন জবাবদিহি নেই। যদি কোন শ্রমিক গার্মেন্টসের বানানো আইন কে না মানে বা তাদের কথামত না চলে তাহলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাকে চাকরি থেকে বের করে দেয়া হয়।

অবশেষে অবহেলিত নির্যাতিত শ্রমিকের পক্ষে কথা বলার জন্য কিছু নবীন ও প্রবীণদের নিয়ে মানবতার ফেরিওয়ালা মোঃ হাসেন মজুমদার শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন – বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, কুমিল্লা জেলা দঃ এর কার্যালয়। গার্মেন্টস এর মালিক কর্তৃপক্ষ জানতো ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের অনিয়ম বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না। তাই তারা শ্রমিক ফেডারেশন বন্ধের লক্ষ্যে নানা রকম চেষ্টা চালিয়ে আসছে। অনেক প্রলোভন দেখায় ফেডারেশনটি বন্ধ রাখার জন্য। ফেডারেশনের সভাপতি মোঃহাসেন মজুমদার নীতিতে অটল থেকে ফেডারেশন এর কার্যাবলী সততার সাথে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

এমত অবস্থায় মালিক কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদেরকে প্রত্যেক লাইনে লাইনে গিয়ে বলে -যদি কোন শ্রমিক ফেডারেশনে ভর্তি হয় , তাহলে তাকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হবে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন অফিসের সামনে বসানো হয় গার্মেন্টস এর সিসি ক্যামেরা। যার কারণে সাধারণ শ্রমিক ফেডারেশনের অফিসে সরাসরি এসে কোন অভিযোগ করতে পারত না। ফেডারেশনের অফিসে যদি কোন শ্রমিক অন্য কোন কাজে দেখা করতে আসে তাকেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয় অথবা তার কাজের চাপ বাড়িয়ে দেওয়া হয় যাতে শ্রমিক নিজ থেকে চাকরী ছেড়ে দেয়।

শেষ পর্যন্ত অত্যাচারীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শ্রমিকরা বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনে অভিযোগ করলে কুমিল্লা জেলা দঃ সভাপতি মোঃহাসেন মজুমদার অসহায় শ্রমিকদের আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন। নির্যাতিত-নিপীড়িত অসহায় শ্রমিকদের পক্ষে সংগঠনটির সহায়তায় চৌদ্দগ্রাম থানায় বেশ কয়েকটি মামলা করা হয় ।

দীর্ঘ আট বছর ধরে যে শ্রমিক নির্যাতন করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি একেবারে নির্যাতন বন্ধ না হক নির্যাতনের মাএা কিছুটা কমেছে এই ফেডারেশনের জন্যে।