মাহফুজ বাবু

গত ২০ আগষ্ট গভীর রাতে ময়নামতি সেনা মিলনায়তন মার্কেটের লক্ষণ হেয়ার কাটিং সেলুনে খুন হয় ময়নামতি ফরিজপুর এলাকার ভাড়াটিয়া জাহের আলির ছেলে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী দেলোয়ার (২৮)। হত্যাকান্ডের পর লাশ বস্তায় ভরে দোকানে রেখে তালা দিয়ে পালিয়ে যায় হত্যাকারী দোকান মালিক লক্ষণ। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পিবিআই সিআইডি ডিবি সহ প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিট। ফোন নাম্বার সহ সন্দেহভাজন হত্যাকারিকে ধরতে শুরু হয় অভিযান। নিরলস পরিশ্রম ও লাগাতার চেষ্টায় খুব অল্প সময়েই সফল হয় কুমিল্লা পিবিআই।

ঘটনার ৩০ঘন্টার মধ্যে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে চাঁদপুর সহ কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা সাদা পোশাকে অভিযান চালাতে থাকে। বিভিন্ন ফোন কলের লোকেশন ঘুরে সম্ভব সব জায়গায় কয়েকটি টিমে ভাগ হয়ে আসামীকে ধরতে চেষ্টা চালায়। তবে দ্রুত অবস্থান পরিবর্তনের কারনে বেগ পেতে হয় তাদের, তবুও লেগে থাকে নিরলস। অবশেষে একটি ফোন কলের সূত্র ধরে দুপুর ২টায় অবস্থান নিশ্চিত হয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলার চিতোশী নামক এলাকায় সতর্কতার সাথে হত্যাকারী লক্ষণের অবস্থান ঘিরে ফেলে ইন্সপেক্টর তৌহিদ, এসআইএস সাহাদাত সহ সঙ্গীয় পিবিআই সদস্যরা । অতঃপর হত্যাকারী লক্ষণ ধরা পরে পিবিআই এর জালে। খুনি লক্ষণ চন্দ্র শীল (৩৮) কে আটকের পর স্বীকারোক্তি মতে লক্ষণকে নিয়ে আসা হয় গ্যারিসন সিনেমা হল সংলগ্ন তার সেলুন দোকানে।

ঘটনাস্থলে ঘুরেঘুরে হত্যাকান্ডে লোমহর্ষক বর্ণনা এবং ব্যবহৃত সরঞ্জাম সহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় লক্ষণের নিজ বাড়ি সদর উপজেলার আমতলী এলাকায়। বাড়ির উঠোনের এক কোনে মাটি খুড়ে পুঁতে রাখা দেলোয়ারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দুটোও উদ্ধার করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া পিবিআই পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদে লক্ষণ শীল নিজেই হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। দেলোয়ারের নিকট তিন লক্ষ পাওনা টাকার জেরেই ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে। লক্ষণ জানিয়েছে বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে দেলোয়ার প্রায় তিন লক্ষ টাকা ধার নেয় ব্যবসার জন্য এই টাকা ফেরত চাইলে নানা তাল বাহানা ও বিভিন্ন সময় বিচার শালিসও হয়। এর জেরেই হত্যা করা হয় তাকে। অধিকতর তদন্ত এবং আসমীকে আরো জিজ্ঞেসাবাদ শেষে আর কেউ জড়িত আছে কিনা হত্যাকান্ডের সাথে, এবং কেন হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে জানা যাবে। লক্ষণ প্রতিবেদককে জানায়, দীর্ঘদিন দেলোয়ার টাকা নিয়ে ঘুরাঘুরি করছিলো। টাকা না দিয়ে উল্টো হুমকি ধমকি দিত। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে মারার পরিকল্পনা করে লক্ষণ।

ঘটনার রাতে দোলোয়ার দোকানে এলে তার শরির ম্যসেজ সহ নানা কথায় রাত গভীর হয়। রাত আনুমানিক ১টার পর মার্কেট বন্ধ ও নিরব হলে দেলোয়ার চেয়ারে বসে বিশ্রামরত অবস্থায় দোকানে আগেই তৈরি করে রাখা দা ও চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ টুকরো করে বস্তায় ভরে বাইরে বাহিরে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা ছিলো তার। তবে ভোর হয়ে আসায় ঘাবড়ে যায় সে। লাশ বস্তায় রেখেই দোকানের বাইরে তালা দিয়ে বাড়িতে যায় সেখানে দেলোয়ারের মোবাইল গুলো মাটির নিচে লুকিয়ে গোসল করে। স্ত্রীর কাছ থেকে একহাজার টাকা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে। প্রথমে চাঁদপুর এরপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকে।

রবিবার দুপুরে পিবিআই তাকে চিতোশী থেকে আটক করে। হত্যাকারী লক্ষণ শীল জেলার সদর উপজেলার আমতলী এলাকার মৃত নিখিল চন্দ্র শীলের ছেলে। এদিকে নিরীহ প্রকৃতির লক্ষণ শীলের এমন হিংস্রতা ও নৃশংস ঘটনায় এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইলের বাসিন্দা হলেও জন্মের পর থেকে দেলোয়ার ও তার পরিবার কুমিল্লায় বসবাস করে আসছে। সে পেশায় একজন ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী।

নিহত দেলোয়ারের ১২বছর বয়সী কন্য জান্নাতুল ফেরদৌস, স্ত্রী, ছোট ভাই রবিন ও বড় ভাই আক্তার সহ স্থানীয়রা আসামীকে দ্রুত গ্রেফতার করায় প্রশাসন কে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।