নিজস্ব প্রতিবেদক


কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কালির বাজার ইউনিয়নের কমলাপুর ছমুয়ারপাড় এলাকায় আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারি খ্যাত স্থানীয় সন্ত্রাসী আরিফ ও তার সহযোগীদের মধ্যেযুগীয় অমানুষিক নির্যাতনে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে স্থানীয় যুবক তানভীর৷ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে গত ১৫দিন ধরে চিকিৎসাধীন তানভীর পুরুষাঙ্গ হারিয়ে পুরুষত্বহীন হওয়ার আশংকা সেই সাথে দুই পায়ে পচন ধরতে শুরু করেছে। বর্বর এ ঘটনার অর্ধমাস পেরিয়ে গেলেও মুল হোতা আরিফ এখনো অধরা। সন্ত্রাসীদের ভয়ে আতংকিত ভুক্তভোগী পরিবারকে মামলা তুলে নিয়ে সমঝোতা করার জন্য হুমকি ধমকি দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে আসমীদের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, স্থানীয় এলাকাবাসী ও মামলার বিবরণে জানা যায়, ধনুয়াখলা (বেলুন নগর) গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে তানভীর (২২) দীর্ঘদিন একই গ্রামের হাজী বাড়ির ফয়েজ মিয়ার ছেলে আরিফ এর মুরগীর ফার্মে কাজ করতো। বেশ কিছুদিন পূর্বেই আরিফের ফার্মে চাকরি ছেড়ে দেয়। গত ১৫আগষ্ট দুপুর ১টায় ইকবাল নামে আরিফের এক সহযোগী তানভীর কে কাজ আছে বলে বাড়ি থেকে ডেকে আরিফের ফার্মের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে আরিফ সহ তার অন্যান্য সহযোগীরা তানভীর কে ধরে ফার্মের একটি ঘরে ঢুকিয়ে শিকল ও গামছা দিয়ে দিয়ে খুটির সাথে হাত পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। পরে আরিফ সহ তার সহযোগীরা আরিফের ভাতিঝির সাথে তানভীরের সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করে এসএস পাইপ ও রড দিয়ে পেটাতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কয়েক দফায় দুপায়ের হাটুর নিয়ে পিটিয়ে এবং ছুড়ি দিয়ে খুঁচিয়ে গুরুতর আহত করে। সন্ধ্যার পর অন্য আরেকটি কক্ষে নিয়ে তানভীরের পুরুষাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেয়। একপর্যায়ে উত্তপ্ত গরম পানি পুরুষাঙ্গে ঢেলে দিলে পেটের নিচের অংশসহ ঝলসে যায়। তীব্র যন্ত্রণায় জ্ঞান হারলে মৃত ভেবে তানভীর কে ফার্মের পাশের একটি বাঁশঝাড়ে ফেলে চলে যায়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৭টায় পরিবারের লোকজন তানভীর কে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সে বর্তমানে হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নাজিরা বাজার ফাঁড়ি পুলিশের একটি টিম খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবপ ঘটনাস্থলে গেলেও কাউকে আটক করতে পারেনি।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তানভীরের পিতা দুলাল মিয়া বাদী হয়ে গত ২৯ আগষ্ট কোতয়ালী মডেল থানায় আরিফ কে প্রধান আসামী করে তার সহযোগী রায়চোঁ গ্রামের মনির, ধনুয়াখলা কাজীবাড়ি’র হিমেল, কমলাপুর দক্ষিণপাড়া’র আক্তার, ধনুয়াখলা বেলুন নগর’র আবুল ফয়েজ ও ইকবাল সহ অজ্ঞাতদের আসামী করে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করে।

ভুক্তভোগী তানভীরের পিতা বলেন, “আরিফ একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। বিদেশে ইয়াবা পাচারে জড়িত যা প্রশাসন সহ এলাকার সকলেই জানেন। আমার ছেলে তার ফার্মে চাকরি ছেড়ে দেয়ায় এবং আরিফের ইয়াবা ব্যবসায় সহযোগীতা না করায় তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করতেই মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন করেছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা সহ একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা আরিফ গং স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। আমার ছেলে মৃত্যুশয্যায় হাসপাতালে, এতদিন হয়ে গেলেও আরিফ বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উল্টো মামলা তুলে নিয়ে সমঝোতা করতে বিভিন্ন ভাবে ভয় ভীতি দেখাচ্ছে, হুমকি দিতেছে” ।
আরিফসহ জড়িতদের সকল কে দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর পরিবার, স্বজন সহ স্থানীয় এলাকাবাসী।

এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আরিফের সাথে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত নাম্বারে ফোন দিলেও রিসিভ করেন নি।

এবিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানাধীন নাজিরা বাজার ফাঁড়ি পুলিশের এসআই ফারুক আহাম্মেদ বলেন, ইতিমধ্যেই আসামীদের দু’জনকে আটক করে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে। আরিফ সহ অপর আসামীরা পলাতক রয়েছে, অভিযান অব্যহত আছে শীঘ্রই ঘটনার সাথে জড়িত সকল আসামী গ্রেফতার হবে আশাকরি।