করোনার প্রাদুর্ভাবে গত দেড় বছর বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময়ে ছিল একাধিক লকডাউন। ফলে স্তিমিত হয়ে পড়েছিল চাকরির বাজার। এমনকি স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় নেওয়া যাচ্ছিল না চাকরির পরীক্ষাও। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খোলার পর চাকরির বাজারের জটও খুলতে শুরু করেছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে; কিন্তু চাকরির পরীক্ষাগুলো শুক্রবারকেন্দ্রিক হওয়ায় এক দিনেই একাধিক পরীক্ষা হচ্ছে। এতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
গত মাস থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয় চাকরির পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছে। তবে একই দিনে একাধিক পরীক্ষা থাকায় বিপাকে পড়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। আগামী শুক্রবার একই দিনে মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠান চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার সূচি প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি পরীক্ষা পড়েছে একই সময়ে। শুক্রবার বিসিএস নন-ক্যাডারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অধীন দপ্তরগুলোর জন্য ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর পদে পরীক্ষা থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার তা পরিবর্তন করা হয়েছে। এই পরীক্ষা আগামী ১৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘আগামী শুক্রবার একাধিক পরীক্ষা থাকায় আমরা নন-ক্যাডারের পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করেছি। আপাতত যত দিন চাকরির পরীক্ষা বেশি থাকবে তত দিন আমরা শুক্রবার-শনিবার পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
অন্যান্য পরীক্ষার ব্যাপারে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সমন্বয়ের জায়গা নেই। এটা যদি থাকত, তাহলে অন্তত সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলোর তারিখ কেন্দ্রীয়ভাবে ঠিক করা যেত। আর এখন এক দিনে একাধিক পরীক্ষার তারিখ পড়ে যাওয়ায় চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
আগামী শুক্রবার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি, বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর), সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), সাধারণ বীমা করপোরেশন, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পদ্মা অয়েল কম্পানি লিমিটেড বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো পরীক্ষা শুক্রবার একই সময়ে পড়েছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক (জেনারেল) পদের নিয়োগ পরীক্ষা শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা। একই সময়ে সূচি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) পদের নিয়োগ পরীক্ষারও। একই দিনে ১৪টি পরীক্ষা হওয়ায় কোনো কোনো প্রার্থীর চার-পাঁচটি পরীক্ষা পড়েছে ওই দিনে।
মাহমুদ হোসাইন নামের এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘শুক্রবার আমার একসঙ্গে দুটি পরীক্ষা পড়েছে। আমাদের একটি চাকরির আবেদনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হচ্ছে। দীর্ঘদিন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না থাকায় এখন অনেক আবেদন করতে হচ্ছে। কিন্তু এক দিনেই একাধিক পরীক্ষা পড়ে যাওয়ায় একটার বেশি পরীক্ষা দেওয়া যাচ্ছে না। এতে যে টাকা গচ্চা যাচ্ছে, তা আমাদের মতো বেকারের জন্য অনেক টাকা। আবার পরীক্ষা দিতে না পারায় চাকরির সুযোগও কমে যাচ্ছে।’
একই দিনে একাধিক পরীক্ষা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরির গ্রুপগুলোতে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেক চাকরিপ্রার্থীকে। কেউ কেউ দিনটিকে দুঃখময় দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন। চাকরিপ্রার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
চাকরির বয়স ৩২ আন্দোলনের সমন্বয়কারী মানিক হোসেন রিপন বলেন, ‘আমরা একেকজন ২০ থেকে ৩০টা চাকরির আবেদন করে বসে আছি। অথচ দিতে পারছি দু-চারটা। গত শুক্রবারও একই অবস্থা হয়েছে। আগামী শুক্রবারেরও একই অবস্থা। এখন কোনটা রেখে কোনটার পরীক্ষা দেব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এক দিনে দুটির বেশি সরকারি চাকরির পরীক্ষা না রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
শুধু সরকারি চাকরিই নয়, গত মাস থেকে অনেক বেসরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হচ্ছে।
বিডিজবস সূত্রে জানা যায়, গত বছর করোনার প্রথম পর্যায়ে ৭০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চাকরির বিজ্ঞাপন কমে গিয়েছিল। এরপর নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত চাকরির বাজার অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর এপ্রিল মাসে সেই চাকরির বিজ্ঞাপন ৫০ শতাংশ কমে যায়। তবে গত মাস থেকে তা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।