নিজস্ব প্রতিবেদক
কুমিল্লা বুড়িচংয়ের ময়নামতিতে নিজ বাড়ির পাশে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ছুরিকাঘাতে নৃশংস ভাবে কামাল হোসেন (৩২) হত্যাকান্ডের ১২ দিনেও ধরাছোঁয়ার বাইরে খুনিরা। মুল ঘাতক ময়নামতি বাজেহুরা গ্রামের কিশোর গ্যাং লিডার তুষার, আবির, সাব্বির, রাহাত, সিফাত, সাজিদসহ জড়িত সকল খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে নিহতরের পরিবার স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী। ২৯ জুলাই শনিবার সকাল সারে ১০টায় ময়নামতির বাজেহুরা, হরিণধরা হয়ে দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির গেইটে বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। পরে কুমিল্লা সিলেট মহাসড়কের দেবপুর বাজার সড়কের পাশে ব্যানার ও পোষ্টার হাতে নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সভা করেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে নিহত কামালের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে আক্ষেপ জানিয়ে বলেন,’ মাদক সেবনে বাঁধা দেয়ায় ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বাড়ির পাশে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে আমার স্বামীকে। এলাকার বহু মানুষের সামনেই তাকে হত্যা করা হয়। এত দিন হয়ে গেলেও হত্যাকারীরা এখনো ধরা পরেনি। উল্টো পুরো পরিবারকে শেষ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। খুন করে উল্টো খুনের প্রতিবাদ করায় এলাকার নিরিহ মানুষ কে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করছে। পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ছিলো আমার স্বামী। আমি খুনিদের ফাসি চাই, স্বামী হত্যার বিচার চাই। খুনিরা গ্রেফতার না হওয়ায় আতঙ্কের মাঝে আছি।” মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে নিহত কামালের বৃদ্ধ মা সাহারা বেগম, বাবা, ভাই সহ ময়নামতি ইউপি সদস্য (২নং ওয়ার্ড) কামাল হোসেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজান, সদ্য ঘোষিত ময়নামতি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি অভি, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলম সহ উপস্থিত সকলে দ্রুত কামাল হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই রাত আনুমানি সারে ১০টায় ময়নামতি ইউনিয়নের বাজেবাহেরচর (রায়পুর) গ্রামে বাড়ির পাশে মাদক ও গাঁজা সেবনে বাঁধা দেয়া ও পূর্ব বিরোধের জেরে কিশোর গ্যাং এর হাতে কামাল হোসেন বেগ নামে (৩২) বছর বয়সী এক যুবক মারধর ও ছুরিকাঘাতে খুন হয়।
নিহত কামাল হোসেন বাজেবাহেরচর গ্রামের আব্দুল মজিদ বেগের ছেলে। এক ছেলে ও এক মেয়ের পিতা কামাল হোসেন, পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন। একই এলাকার সংঘবদ্ধ কিশোর গ্রুপ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মারধর ও বুকে ছুরিকাঘাত করে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন সহ বুড়িচং থানা ও দেবপুর ফাঁড়ি ও বুড়িচং থানা পুলিশের কর্মকর্তারা।
নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ময়নামতি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সিপন এর ছেলে তুষার এর নেতৃত্ব ৮/৯ জনের একটি গ্রুপ রাতে বাড়ি থেকে ফোন করে কামাল কে স্থানীয় একটি বেকারির সামনে আসতে বলে। সেখানে গেলে তুষার ও তার সহযোগিরা কামালের ওপর হামলা করে। মারধরের এক পার্যায়ে তুষার তার হাতে থাকা সুইচ গিয়ার (ছুরি) দিয়ে বুকে পিঠে আঘত করলে মাটিতে লুটিয়ে পরে কামাল। এসময় বাঁধা দিতে গেলে কামালের বড় ভাই রবিউল সহ অন্যদের ওপরও হামলা চালায় ঘাতকরা। পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে নিহতের স্ত্রী তাছলিম আক্তার বাদী হয়ে ৯ জনের নামে বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
বুড়িচং থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, ঘটনার পরপরই আসামীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। আসামীদের ধরতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ইতিমধ্যেই মামলার ৩নং আসামী সামিউল আহসান সিপন কে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশাকরি শীঘ্রই সকলকে গ্রেফতার করা হবে।