নিজস্ব প্রতিবেদক:

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী তফসিলের শুরু থেকেই জেলার অন্যান্য উপজেলা নির্বাচনগুলো থেকে অনেকটাই আলাদা ছিলো বুড়িচং উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী মাঠের চিত্র। এর কারন মুলত জনপ্রতিনিধি আপন তিন ভাই। বড় ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আখলাক হায়দার, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য হাজী মোঃ তারেক হায়দার ও ময়নামতি ইউপি চেয়ারম্যান লালন হায়দার এবং আখলাক হায়দার পুত্র উপজেলার তরুণদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় আদনান হায়দার। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও প্রতিষ্ঠাকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আবুল বাশার চেয়ারম্যান পরিবার বুড়িচংয়ের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ পরিবারের প্রায় সকলেই সুপরিচিত এবং আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে রয়েছে বিশেষ প্রভাব। এই নির্বাচনে বড় ভাই আখলাক হায়দার এর প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী হন হাজী মোঃ তারেক হায়দার। এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতাদের আরো দুজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তবে শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন তারা দুই ভাই। একদিকে কুমিল্লা ৫ আসনের (বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া) বর্তমান এমপি এমএ জাহের ও কুমিল্লার রাজনীতিতে আইকন হিসেবে পরিচিত সদর আসনের এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের সমর্থনে মুক্তিযোদ্ধা আখলাক হায়দার। অপর দিকে স্থানীয় ভাবে জনপ্রিয় মুখ ছোট ভাই, তিন বারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান লালন হায়দার ও সংসদ নির্বাচনে পরাজিত দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের সমর্থনে হাজী মোঃ তারেক হায়দার। ফলেই পারিবারিক দ্বিধা বিভক্তি ছড়িয়ে পরে রাজনৈতিক অঙ্গনের নেতাকর্মীদের মাঝেও। নির্বাচনী মাঠে টানটান উত্তেজনা, প্রচার প্রচারণা, মিছিল মিটিংয়ে সরগরম ছিলো বুড়িচং উপজেলা।
২৯ মে ভোটের দিন সকাল থেকেই ঘোড়া প্রতিক নিয়ে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার টেলিফোন প্রতিকে হাজী মোঃ তারেক হায়দার, আনারস প্রতিকে ইঞ্জিনিয়ার বাছির খান ও দেয়াত কলম প্রতীকে এড. রেজাউল করিমের মধ্যে ভালোই প্রতিযোগিতা দেখা যায়।
দুপুর ১২টায় বিভিন্ন ফেসবুক পোষ্টে , “আখলাক হায়দার ও তার ভাই তারেক হায়দার মিলে গেছেন”। এমন কিছু স্টাটাস ও কানাঘুষা ছড়িয়ে পরে উপজেলার কেন্দ্র গুলোতে। আবার কিছু সময় পরে দেখা যায়, তারেক হায়দারের (তিনি নিজে চালান না আইডিটি) নামে পরিচালিত ফেসবুক থেকে স্টাটাস দেয়া হয়, এমন কিছু হয়নি তারা মিলেন নাই।
তবে এসব বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে দুপুরে দিকে সাংবাদিক মাহফুজ বাবু’র ফেসবুক আইডি ও পেইজ, ছোট ভাই ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ লালন হায়দার ও হাজী তারেক হায়দার এর ফেসবুক পেইজ থেকে প্রচার করা হয়, তিন ভাই মিলিত হয়েছেন এবং বড় ভাই আখলাক হায়দারের ঘোড়া প্রতিকের পক্ষে সমর্থন দিয়ে নেতাকর্মী ও ভোটারদের ঘোড়া মার্কায় ভোট দিতে বলেন। বিষয়টি সাংবাদিক মাহফুজ বাবু তার ফেসবুক আইডিতে শেয়ারও করেন। এরপর মূহুর্তেই বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।
বুড়িচং প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি মাহফুজ বাবু বলেন, দুপুরের দিকে আখলাক হায়দারের ভাইয়েরা যখন বুঝতে পারেন তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। নিজেরাই বিভেদ ভুলে পারিবারিক ভাবে ঐক্যবদ্ধতার ঘোষণা দেন।

পরবর্তী দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই পুরোপুরি সরব হয়ে ওঠে আখলাক ও তারেক হায়দারের নেতাকর্মী সমর্থক ও ভোটাররা। ঘোড়ায় ভোট দিতে ছুটে আসেন অনেক ভোটার। কর্মীরাও ছোটেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। এর ফলে ভোটের মাঠ মুহুর্তেই মোড় নেয় পুরোদমে আখলাক হায়দারের ঘোড়ার পক্ষে। রব ওঠে গোটা কুমিল্লায় জুড়ে, আর এ নিয়ে চলে আলেচনা। অনেকেই বলতে শুরু করেন “এক ফেসবুক পোস্টেই বাজিমাত”। অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১২ হাজারেরও অধিক ভোটের ব্যবধানে মোট ৩৭৭৮৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ফের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আখলাক হায়দার।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে এ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা যুবলীগ নেতা ইঞ্জি. বাছির খান পেয়েছেন ২৫ হাজার ৪৫৩ ভোট।