বিয়ের কাবিননামা (রেজিস্ট্রেশন) ফরমের ৫ নম্বর কলামে কনে ‘কুমারী’ কি না এই শব্দ উঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ‘কুমারী’ শব্দের স্থলে ‘অবিবাহিত’ লিখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কাবিননামার ফরমে ৪-এর (ক) উপধারা সংযোজন করে ছেলেদের ক্ষেত্রে বিবাহিত, অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত কি না তা লিপিবদ্ধ করতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আজ রোববার এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি। বিয়ের কাবিননামার ফরমে কনে ‘কুমারী’, ‘বিধবা’ ও ‘তালাকপ্রাপ্ত’ সংক্রান্ত ৫ নম্বর কলাম থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়।
রায় শেষে অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, বিয়ের কাবিননামায় দুটি কলামে বৈষম্যের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে রিট করেছি। আদালত শুনানি শেষে বিয়ের কাবিননামা (রেজিস্ট্রেশন) ফরমে ৫ নম্বর কলামে কনে ‘কুমারী’ কিনা এই শব্দ উঠিয়ে দিতে বলেছেন। ‘কুমারী’ শব্দের পরিবর্তে ‘অবিবাহিত’ লিখতে রায় ঘোষণা করেছেন।
‘এ ছাড়া কাবিননামার ফরমে ৪-এর (ক) উপধারা সংযোজন করে ছেলেদের ক্ষেত্রে বিবাহিত, অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত কি না তা লিপিবদ্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এতে করে ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকবে না,’ যোগ করেন আইনজীবী।
রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালে কাবিননামার ফরমের (বাংলাদেশ ফরম নম্বর ১৬০০ ও ১৬০১) ৫ নম্বর কলাম কেন বৈষম্যমূলক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে কেন ‘কুমারী’ শব্দটি বিলোপ করে কাবিননামা সংশোধন করা এবং বরের বৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কিত কোনো ক্রমিক কাবিননামায় উল্লেখ করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। রুল শুনানির একপর্যায়ে মেয়ে অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান কাবিননামায় মেয়েদের তথ্যের পাশাপাশি ছেলেরা বিবাহিত, অবিবাহিত বা তালাকপ্রাপ্ত কি না, তা অন্তর্ভুক্তের জন্য সম্পূরক আবেদন করেন।
পরে আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি বলেন, এসব বিষয়ের পাশাপাশি বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের সময় উভয় পক্ষের (বর ও কনে) ছবি কাবিননামায় কেন সংযুক্ত করা হবে না, সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়।
এই রুলের শুনানিতে আদালতে মতামত দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, কাবিননামায় ৫ নম্বর কলামে এটা থাকা উচিত না। কারণ, এটি ব্যক্তির মর্যাদা ও গোপনীয়তাকে ক্ষুণ্ণ করে এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এগুলো থাকা বাধ্যতামূলক নয়। মুসলিম শরিয়তে এ ধরনের শর্ত নেই।
ওই অনুচ্ছেদটি বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, নারীপক্ষ এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনটি করে।