অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে লাইটার জাহাজ ভাড়া করা ও পণ্য পরিবহনে জটিলতা দূর করতে যাত্রা শুরু করলো দেশের প্রথম মোবাইল অ্যাপ ‘জাহাজী’। এর মাধ্যমে লাইটার জাহাজের মালিক, সাপ্লাইয়ার, ক্যারিয়ার, এজেন্ট এবং ব্রোকাররা ঘরে বসেই জাহাজ বুকিং দেয়ার পাশাপাশি সেটার অবস্থান নিশ্চিত হতে পারবেন। করা যাবে চলন্ত জাহাজ থেকেও বালি, পাথর কেনা-বেচা।

আপাতত গুগল প্লে-স্টোর থেকে এ্যাপটি ডাউনলোড করে যে কোন এ্যানড্রয়েড মোবাইলে ব্যবহার করা যাবে। খুব শিগগিরই আসছে আইফোন ভার্সনটিও।

রোববার দুপুর ১২টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী অডিটোরিয়ামে অ্যাপটির উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী জনাব খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাহাজী অ্যাপের মাধ্যমে নৌ-পরিবহন খাতে যুক্ত বিশাল একটি জনগোষ্ঠী নানা বিপত্তির হাত থেকে মুক্তি পাবে।

তিনি আরও বলেন, নৌ সেক্টর অপার সম্ভাবনাময় একটি খাত। এই সেক্টরে নতুন উদ্যোক্তাদের আমরা সবসময় স্বাগত জানাই। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি এবং ডেল্টা প্লান বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর এজন্য দরকার স্থিতিশীলতা। অস্থিতিশীলতা তৈরীর পরিণাম ভালো হয়নি।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশকে অন্ধকার থেকে তুলে এনেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই আলোর যাত্রা অব্যাহত রাখতে সবার এগিয়ে আসা উচিত।

তিনি আরও বলেন, জাহাজীর তরুণ উদ্যোক্তারা দেশের মধ্যে থেকে, দেশের কাদামাটি শরীরে মেখেই এই দেশটাকে বদলে দিতে চায়। জাহাজীর মতো উদ্যোক্তারা দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাবে এই আশা রাখছি।

বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেন, ‘গত কয়েকদশক ধরেই আমি এই সেক্টরের মানুষ। একজন অংশীদার এবং সংগঠনের নেতা হিসেবে এই সেক্টরের ভেতর বাহিরটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আমি মনে করি, জাহাজী অ্যাপ এই সেক্টরের একটি গেইম চেঞ্জার হতে যাচ্ছে।’

সকল বাধা বিপত্তি পিছনে ফেলে জাহাজীর মতো নতুন স্বপ্নগুলো দেশ গড়ার কাজে ভুমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।  

এ সময় প্রযুক্তি পরামর্শক নাঈমুজ্জামান মুক্তা বলেন, সেবার জন্য মানুষকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না। সেই স্বপ্ন নিয়ে ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি তরুণরাও উদ্যমী ভূমিকা রাখছে।  

অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাতে ডিজিটাইজেশনে জাহাজী ভূমিকা রাখবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, জাহাজীর মতো অ্যাপ তৈরিতে তরুণ উদ্যোক্তাদের সুযোগ প্রদান করার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথ সুগম হবে।

জাহাজীর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কাজল আব্দুল্লাহ বলেন, জাহাজী অ্যাপের মাধ্যমে লাইটার জাহাজের মালিক, সাপ্লাইয়ার, ক্যারিয়ার, এজেন্ট এবং ব্রোকাররা ঘরে বসেই জাহাজ বুকিং দেয়ার পাশাপাশি সেটার অবস্থান নিশ্চিত হতে পারবেন। পাশাপাশি চলন্ত জাহাজ থেকে পণ্যের মূল্য এবং মান যাচাই করে বালি, পাথরের মতো পণ্য কিনতে পারবেন। লাইটার জাহাজের জন্য এই সেবা বিশ্বের আর কোথাও নেই।

তিনি বলেন, লাইটার জাহাজ ছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থাই অচল। অভ্যন্তরীণ নৌপথ পণ্য পরিবহনের সবচেয়ে সহজ, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হওয়া স্বত্ত্বেও এবং নৌখাতের দৈর্ঘ্য বাড়ার পরেও এইখাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ার বদলে উল্টো কমছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিগত বছরের তুলনায় এই খাতে পণ্য পরিবহন ৩৩ শতাংশ কমেছে।

কাজল আব্দুল্লাহ আরও বলেন, সরকারি হিসেবে পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা ৭ হাজারের কম হলেও বাস্তবে সেটি ৩০ হাজারের মতো। এ খাতে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশী গত বছরই জাহাজ ভাড়া বাবদ ব্যয় হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে পণ্যবাহী জাহাজ ভাড়া করা ও পণ্য পরিবহনে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত থাকে।

এইপক্ষগুলো হলো- লাইটার জাহাজ মালিক, সাপ্লায়ার, ক্যারিয়ার, এজেন্ট এবং ব্রোকার। এই সেক্টরটি এখনও প্রাচীন পদ্ধতিতে পরিচালিত হয় এবং এ খাতের সকল ব্যবসায়িক যোগাযোগ এবং অঙ্গীকার মুখের কথার উপরেই নির্ভরশীল। সেজন্য এই খাতের বিভিন্ন পক্ষগুলি অনুমানের উপর ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কেননা এই সেক্টরে এমন কোন নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম নেই, যেখান থেকে ভেরিফায়েড তথ্য পাওয়া যাবে। এটাই এই সেক্টরের একটা কালচার হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রচলিত সিস্টেমে লাইটার জাহাজের ভাড়া, ধারণ ক্ষমতা বা ঠিক কোথায় আছে যাচাই করে জাহাজ ভাড়া করা অসম্ভব। জাহাজী অ্যাপের মাধ্যমে সকল পক্ষই উপকার পাবেন এবং ব্যবসাকে আরো গতিশীল এবং সাশ্রয়ী করতে পারবেন।   

আপাতত গুগল প্লে-স্টোর থেকে এ্যাপটি ডাউনলোড করে যে কোন এ্যানড্রয়েড মোবাইলে ব্যবহার করা যাবে। খুব শিগগিরই আসছে আইফোন ভার্সনটিও আরো কিছু সুবিধা নিয়ে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- জাহাজী লিমিটেডের সভাপতি বাহাউদ্দীন রূপক ও জাহাজী লিমিটেডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অভিনন্দন জোতদার, জাহাজ মালিক ইফতেখার আলী মনা এবং ক্রেতাদের পক্ষ থেকে চায়নিজ প্রতিষ্ঠান সি এইচ ডাব্লিউ ই এর অফিস অ্যাডমিন মি. ওয়াং।