তিন বছর আগের আলোচিত ওই হত্যা মামলায় বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ রায়ের জন্য ৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
সিদ্দিক বাজারের ব্যবসায়ী রমজান হোসেনের মেয়ে রিশা ঢাকার কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত।
২০১৬ সালের ২৪ অগাস্ট দুপুরে স্কুলের সামনে ফুটব্রিজে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। চার দিন পর হাসপাতালে মারা যায় ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরী।
হামলার দিনই রিশার মা তানিয়া বেগম রমনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় এবং দণ্ডবিধির ৩২৪/৩২৬/৩০৭ ধারায় হত্যাচেষ্টা ও গুরুতর আঘাতের অভিযোগে মামলা করেন। রিশা মারা যাওয়ার পর এটি হত্যামামলায় পরিণত হয়।
মেয়ে হত্যাকাণ্ডের পর দরজি দোকানের কর্মচারী ওবায়েদুল খানকে সন্দেহের কথা জানিয়েছিলেন রিশার মা। রিশার সহপাঠীদের বিক্ষোভের মধ্যে ৩১ অগাস্ট নীলফামারীর ডোমার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ওবায়েদুলকে।
![রিশা হত্যামামলার একমাত্র আসামি ওবায়েদুল খান](https://d30fl32nd2baj9.cloudfront.net/media/2016/09/01/80_obayed_risha_010916_0001.jpg/ALTERNATES/w300/80_Obayed_Risha_010916_0001.jpg)
রিশা হত্যামামলার একমাত্র আসামি ওবায়েদুল খানদিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মীরাটঙ্গী গ্রামের আবদুস সামাদের ছেলে ওবায়েদুল ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মলে মলে বৈশাখী টেইলার্স নামের একটি দর্জির দোকানের কর্মচারী ছিলেন।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর ওবায়েদুল (৩০) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, প্রেমের প্রস্তাবে রিশা রাজি না হওয়ায় তাকে খুন করেছিলেন তিনি।
তদন্ত শেষে রমনা থানার পরিদর্শক আলী হোসেন ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর ওবায়দুলকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। রিশার চার সহপাঠীসহ ২৬ জনকে সাক্ষী করা হয় সেখানে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, রিশার মা তানিয়া ওই হত্যাকাণ্ডের ৫/৬ মাস আগে রিশাকে নিয়ে বৈশাখী টেইলার্সে কাপড় সেলাই করাতে যান। এরপর দোকানের রসিদের কপি থেকে ফোন নম্বর নিয়ে দোকানের কর্মচারী ওবায়দুল ফোনে রিশাকে বিরক্ত করতে থাকে। রিশা প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওবায়দুল তাকে ছুরি মেরে হত্যা করে।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল আদালত অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামি ওবায়দুলের বিচার শুরুর আদেশ দেয়।
বাদীপক্ষের ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে মোট ২১ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষে ওবায়দুল হককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। ১১ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
![](https://d30fl32nd2baj9.cloudfront.net/media/2016/08/29/risha_1.jpg/ALTERNATES/w300/risha_1.jpg)
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মদ বলেন, “আমার মক্কেল নির্দোষ। তার বোন ও ভগ্নিপতিকে আটকে রেখে এবং তাকে নির্যাতন করে পুলিশ স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। আশা করি আদালতের রায়ে সে খালাস পাবে।”
অন্যদিকে এ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, “আসামি প্রকাশ্য দিবালোকে একটা মেয়েকে ছুরি মেরে হত্যা করেছে। তার এমন সাজা হওয়া উচিত যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে সাহস না পায়। আমরা তার সর্বোচ্চ সাজা আশা করছি “
এ মামলায় রিশার পরিবারকে আইনি সহায়তা দেয় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
সমিতির সদস্য ফাহমিদা আক্তার রিংকি বলেন, “এক বছরের মধ্যেই এ মামলার বিচার কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনজন সাক্ষীর বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ার কথা বলে আসামিপক্ষ তাদের সাক্ষ্য শিশু আদালতে নেওয়ার দাবি জানায়।
“তারা এ জন্য হাই কোর্টও গিয়েছিলেন। কিন্তু মামলার আসামি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় (২২ বছর) তার বিচার জজ আদালতেই চলতে পারে বলে হাই কোর্ট আদেশ দেয়। এ কারণে মামলার বিচার শেষ করতে দেরি হয়েছে।”
রিশার বাবা রমজান হোসেন বলেন, “আমরা আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। শাস্তি না পেলে এ রকমের অপরাধ আরও ঘটবে। মেয়ে হত্যার বিচার পাব- এ আশায় তিন বছর ধরে আমরা আদালতের বারান্দায় ঘুরছি। আমাদের একটাই দাবি, ওবায়দুলের ফাঁসি চাই।”
তিনি বলেন, “সঠিক বিচার হলে এরকম ঘটনা আর কেউ ঘটাতে সাহস পাবে না। আর ও (ওবায়দুল) যদি ছাড়া পায় তাহলে আবারও অঘটন ঘটাতে পারে। আমার দুই বাচ্চার মধ্যে এখনো ভয় কাজ করে।”