নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২৭৪ জন শিক্ষার্থীর বেতন ও ভর্তি ফি কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেতন ৩৫০-৪৫০ টাকার পরিবর্তে ৬০-৭০ এবং ভর্তি ফি ২২০০-২৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা নেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তিনি। এতে করে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে স্কুলে হাজির হয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে এমন ঘোষণা দেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
সভাপতির এমন ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সদস্য ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সেই সঙ্গে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বেতন ও ভর্তি ফি কমানোর যে ঘোষণা দিয়েছেন তার দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চান অভিভাবকরা।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য এতদিন ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা মাসিক বেতন ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের থেকে ৪৫০ টাকা নেয়া হতো। ভর্তির ফি হিসেবে সবার কাছ থেকে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা নেয়া হতো। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দাবি ছিল বেতন ও ভর্তি ফি কমানোর। দাবির প্রেক্ষিতে তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলাম। পরে স্কুলের কমিটির অন্য সদস্য ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করি এবং পরামর্শ করি। তাদেরকে বোঝানো হয় আমরা যেন ভালো একটি উদ্যোগ নিতে পারি।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, স্কুলের অভিভাবকরা আমাকে জানিয়েছেন ইসদাইর ও আশেপাশে এলাকার ছেলে-মেয়েরা; যারা এই প্রতিষ্ঠানে পড়ে তারা গরিব। অনেকের একাধিক সন্তান। বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে হিমশিম খেতে হয়। প্রতি মাসে বেতন দিয়ে সংসারে টানাপোড়েন দেখা দেয় অভিভাবকদের। তাই স্কুল গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ও সব মেম্বার একসঙ্গে বসে এই সিদ্ধান্তে একমত হই। সে আলোকে বেতন ও ভর্তি ফি কমানোর ঘোষণা দিয়েছি আমরা। এটি বাস্তবায়ন হবে।
সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া ভর্তি ফি ও বেতন ও স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের অনুদানে বিদ্যালয়ের ল্যাব, উন্নত ওয়াশ রুমসহ অনেক উন্নয়নকাজ করতে পেরেছি। শিক্ষার্থীদের সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। তাদের শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ চলছে। বেতন ও ভর্তি ফি কমানোর কারণে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় আরও মনোযোগী হবে।
নতুন বেতন ও ফি অনুযায়ী এখন থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে সাড়ে ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা, ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণিতে সাড়ে ৪০০ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা বেতন দিতে হবে। সব ধরনের ভর্তি ফি ২২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার পরিবর্তে মাত্র ৩০০ টাকা নেয়া হবে।
সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সামান্য বেতনের টাকা নিয়ে এমপিওভুক্ত ছাড়া শিক্ষকদের বেতন দেয়া হবে। সঙ্গে দারোয়ান ও বুয়াদের বেতন দেয়া হবে। যারা এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন তারা সরকারি বেতন পাচ্ছেন। তাদের বেতন দেয়া হবে না। বর্তমান সরকার শিক্ষকদের যে পরিমাণ বেতন দিচ্ছেন তা দিয়ে তারা সুন্দরভাবে চলতে পারছেন। গরিব শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা দিয়ে শিক্ষকরা বিলাসিতা করবে তা হতে পারে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের এটি দাবি ছিল। এখানে যারা পড়ে তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র মা-বাবার সন্তান। অভিভাবকরা বিনাবেতনে পড়ানোর একটি আবেদন করেছিলেন। আমরা তাদের দাবি মেনে নিতে পারিনি। আমাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে স্কুলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটি আমরা এখন থেকে বাস্তবায়ন করব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান আলী আকবর, ম্যানেজিং কমিটি সদস্য বাদল মিয়া, কবির হোসেন, ফয়সাল বিন মান্নান, গোলাম মোস্তফা, সাজেদা বেগম ও শরিফা মজিদ প্রমুখ।