এবার এমবিবিএস (মেডিকেল) ভর্তি পরীক্ষায় প্রত্যক পরীক্ষার্থীর প্রশ্নপত্রের বিন্যাস হবে ভিন্ন। এছাড়া প্রশ্নপত্রের আকার ৮ পৃষ্ঠা থেকে কমে হচ্ছে ২ পৃষ্ঠা।

সোমবার সচিবালয়ে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য জানান। আগামী শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দেশব্যাপী ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আগে ওএমআরসহ প্রশ্নপত্র ছিল ৮ পৃষ্ঠা। এটা সেলাই করার জন্য ১২-১৪ জন মানুষকে আনতে হত। এবার প্রশ্নপত্র ওএমআরসহ ২ পৃষ্ঠা করা হয়েছে, এতে কোন সেলাই নেই।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘আগের প্রশ্নের চারটি সেট থাকত। এবার তা থাকছে না। প্রত্যেকটি প্রশ্নপত্রের বিন্যাস হবে ভিন্ন। প্রশ্নপত্রের বিষয়বস্তু একই হবে, বিন্যাস হবে পুরোপুরি আলাদা। প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে চারটি উত্তরও ভিন্নভাবে সাজানো থাকবে। অর্থাৎ ৭৩ হাজার পরীক্ষার্থীর জন্য ৭৩ হাজার প্রশ্ন হবে।’

প্রশ্নপত্র প্রণয়নে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে তা ফাঁস হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব সুপ্রিয় কুমার কুন্ডু।

তিনি বলেন, ‘আগামী ১১ অক্টোবর দেশব্যাপী একযোগে ১৯টি কেন্দ্রের ৩২টি ভেন্যুতে এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ বছর সরকারি ৪ হাজার ৬৮টি আসন ও বেসরকারি ৬ হাজার ৩৩৬টিসহ ১০ হাজার ৪০৪টি আসনের জন্য ভর্তি পরীক্ষা হবে। এসব আসনের বিপরীতে ৭২ হাজার ৯২৮ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৭ হাজার ৯ জন বেশি।

একটি সুষ্ঠু ও অবাধ প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘এ লক্ষ্যে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ, পরীক্ষার দিন সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নির্বিঘ্নে চলাচল; নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, কোচিং সেন্টার বন্ধ করা, ফটোকপি মেশিন বন্ধ রাখা, পরীক্ষা কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, প্রশ্ন ও উত্তরপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কুচক্রী মহলের অপরাধ তৎপরতা বন্ধে কাজ করা হচ্ছে। এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর সব পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।’

সাইবার-ক্রাইম প্রতিরোধ এবং পরীক্ষার আগের দিন রাত ১০টায় থেকে পরীক্ষার দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত ইন্টারনেটের গতিসীমিত রাখতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বিটিআরসিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানান সুপ্রিয় কুমার।

এ বছর প্রশ্নপত্র প্রণয়নে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্র পাঠানোর জন্য ট্রাঙ্কের সাথে সংযুক্ত ট্র্যাকিং ডিভাইস ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। আইনশৃখলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা তাদের গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারি জোরদার করেছে।’

পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার দিন সকাল ৯টার মধ্যে আবশ্যিকভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে বলেও জানান তিনি।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ঢাকা মহানগরের ৫টি কেন্দ্রের ১১টি ভেন্যুতে ৩৫ হাজার ৯৮৫ পরীক্ষার্থী এবং ঢাকা বাইরে ১৫টি জেলায় ৩৫ হাজার ৯৮৫ পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে কেন্দ্র তদারকির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ১০৭ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে কেন্দ্র ও ভেন্যুভিত্তিক টিম গঠন করে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।’

ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পরিদর্শনকারী টিমসহ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, হেডফোন, ব্লুটুথসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা, বহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলেও জানান সুপ্রিয় কুমার।

তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষার সার্বিক কার্যক্রম তদারকি, নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদানের জন্য ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত গঠিত ওভারসাইট কমিটি সুষ্ঠু ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ্, ওভারসাইট কমিটির সদস্য ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।