দৈনন্দিন জীবনে মানুষকে কত রোগেই না ভুগতে হয়। কিন্তু একটু সচেতনতায় মানুষ এসব রোগ-বালাই থেকে দূরে থাকতে পারে। আজকাল অনেকেই কিডনির সমস্যায় ভোগেন। আর এই কিডনি রোগীদের জন্য একটি বিশেষ ফল খেতে নিষেধ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু কিডনির সমস্যায় নয়, কিডনিকে সার্বিক ভালো রাখতেও এই ফলকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করেছেন গবেষকরা।
জনপ্রিয় এই ফলের নাম কামরাঙা। সম্প্রতি এই ফলকে কিডনির রোগীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করেছেন ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
তবে সাও পাওলো একা নয়, এর আগে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নানা গবেষকও এই একই কথা বলেছেন। আর তাদের মতকে মেনে চলার কথা জানাচ্ছেন ভারতের কিডনি বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ তরফদার। তার মতে, ‘শুধু কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। শুধু তা-ই নয়, যাদের কিডনির অসুখ নেই, তাদের ক্ষেত্রেও ভালো থাকতে চাইলে এই ফল যতটা সম্ভব কম খাওয়াই ভালো।’
চিকিৎসকদের মতে, কামরাঙায় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন সি, সাইট্রিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম ইত্যাদি উপকারী উপাদান যেমন আছে, তেমনই ‘ক্যারামবক্সিন’ (মার্কিন বিজ্ঞানীদের দেওয়া নাম) নামে এক টক্সিনের উপস্থিতিও আছে। মূলত, এই কারণেই কামরাঙাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে চিকিৎসকদের মত।
চিকিৎসকরা জানান, ক্যারামবক্সিন মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। কামরাঙা খাওয়ার ফলে তা শরীরে প্রবেশ করলে কিডনির মূল কাজই হয়, তাকে ছেঁকে শরীরের বর্জ্যের সঙ্গে বার করে দেওয়া। কিন্তু কিডনি দুর্বল হলে সেই কাজ সে ঠিকমতো করতে পারে না। ফলে রক্তের মাধ্যমে ওই টক্সিন মস্তিষ্কে প্রবেশ করে বলে মনে করেন তারা।
এর ভয়াবহতা এতটাই যে, কিডনির সমস্যায় ভুগতে থাকা মানুষ কামরাঙা খেলে, এই টক্সিনের প্রভাবে সাধারণ মাথা যন্ত্রণা থেকে শুরু করে মৃগীর মতো খিঁচুনি, এমনকি মস্তিষ্ক কোষের ক্ষতি হয়ে কোমায় পর্যন্ত চলে যেতে পারেন। এর ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তবে একেবারেই কি কামরাঙা খাওয়া নিষেধ? এ বিষয়ে চিকিৎসক অভিজিৎ তরফদারের মতে, ‘কিডনি সুস্থ থাকলে বা তার স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় থাকলে কামরাঙা খাওয়া চলে, তবে তাও খুব বেশি মাত্রায় নয়। কারণ ঘন ঘন ক্যারামবক্সিন টক্সিন বার করতে করতে কিডনি দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আর যদি কোনো কিডনির অসুখের রোগী এই ফল খেয়েও ফেলেন তা হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ডায়ালিসিসের জন্য।’