পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান ‘৪-ই’ আজ মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বেলা পোনে ১২টার দিকে বসানো হয়েছে। জাজিরা প্রান্তের ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারের ওপর এটি সফলভাবে স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে সেতুর ২২৫০ মিটার এখন দৃশ্যমান। নাব্যতা সংকট মোকাবেলা করে অবশেষে কয়েকদিনের চেষ্টায় এটি স্থাপনে আসলো সফলতা।

১৪তম স্প্যান বসানোর তিন মাস ২৩ দিনের মাথায় স্থায়ীভাবে বসলো এই পঞ্চদশ স্প্যানটি। একের পর এক স্প্যান বসিয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে চলেছে পদ্মা সেতুর। গাড়ি ও ট্রেনে চড়ে পদ্মা পাড়ি এখন ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নেওয়ার পথে। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে আর ২৬টি স্প্যান বসলেই।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়। ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যে আর তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি বহন করে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’  ভাসমান ক্রেন। পদ্মা সেতুর দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী সুবিধাজনক স্থানে এনে ভাসমান ক্রেনটিকে নোঙর করা হয়। এরপর পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। রাখা হয় দুই পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর। স্প্যান বসানোর জন্য উপযোগী সময় এবং সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রকৌশলীরা স্প্যানটি বসাতে সক্ষম হন।

 

সূত্র আরো জানায়, বর্ষা মৌসুম ও নাব্যতা সংকটের কারণে তিন  মাসের বেশি সময় ধরে পদ্মা সেতুতে কোনো স্প্যান বসানো সম্ভব হয়নি। ড্রেজিং করেও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা যাচ্ছিল না। কয়েকদিন আগে স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু হলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় নাব্যতা সংকট। ড্রেজিং করে পলি অপসারণ করেও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছিল না। পলি অপসারণ করার ১-২ ঘণ্টা পরই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসছিল নদীর তলদেশ। অবশেষে নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে স্প্যানটি বসানো সম্ভব হয়।

এর আগে গতকাল সোমবার সকালে জাজিরা প্রান্তের চর এলাকা থেকে ‘৪-ই’ স্প্যানটিকে ভাসমান ক্রেনের মাধ্যমে ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারের সামনে নোঙর করে রাখা হয়।

পদ্মা সেতুর প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, এরইমধ্যে পদ্মাসেতুর আরও পাঁচটি স্প্যান প্রস্তুত। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে স্প্যানগুলো বসাতে দেরি হচ্ছে। সেতুর ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩ নম্বর পিলারের ওপর চারটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা আছে চলতি বছরের মধ্যে। সর্বশেষ ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারের ওপর বসে চতুর্দশ স্প্যান ‘৩ সি’।

জানা যায়, মূল সেতুর বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৮৪ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৭৫.৮৪ ভাগ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর সব কটি পাইল ড্রাইভের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩২টির কাজ শেষ হয়েছে। আর বাকি ১০টির কাজ চলমান। মোট ৪১টি ট্রাস (স্প্যান) এর মধ্যে চীন থেকে এসেছে ৩১টি। এর মধ্যে ১৪টি স্থাপন করা হয়েছে। আর আজ মঙ্গলবার বসানো হলো ১৫তম স্প্যান।

রেলওয়ে স্লাব-এর জন্য মোট ২৯৫৬টি প্রি-কাস্ট প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ২৮৯১টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো শেষ হবে  আগামী নভেম্বরে। এ পর্যন্ত ৩৬১টি স্লাব স্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে, ২৯১৭ টি প্রি-কাস্ট রোডওয়ে ডেকস্ল্যাবের মধ্যে ১৫৫৩টির কাজ শেষ হয়েছে। আর স্থাপন করা হয়েছে ৫৪টি।

মূল সেতুর জন্য চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ২০১ দশমিক ৯৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে, নদী শাসনের বাস্তব কাজের ৬৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। নদী শাসন কাজের আর্থিক অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৪০ শতাংশ। মোট ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

নদী শাসন কাজের চুক্তিমূল্য আট হাজার ৭০৭ দশমিক ৮১ কোটি টাকা, যার মধ্যে চার হাজার ৩৮৮ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সংযোগ সড়কের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।