রাজধানীতে ওয়াসার পানি নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগ নতুন কিছু নয়।  ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি পানের কারণে ডায়রিয়া আমাশয়ের মতো রোগে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসাকে একটি প্রকল্প সরকার অনুমোদন দিলেও তার কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে।

প্রকল্পটি ২০১৩ সালের অক্টোবরে একনেক সভায় অনুমোদন পায়। অথচ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত ছয় বছরে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ২০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অথচ এই পানি সরবরাহ করার জন্য বাড়তি টাকার আবদার করেছে সংস্থাটি। নতুন করে ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা অতিরিক্ত আবদার করেছে ঢাকা ওয়াসা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের (ডিএএসডাব্লিউএসপি) আওতায় এমন বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসা জানিয়েছে,  চলমান প্রকল্পের আওতায় মূল প্রকল্পে থেকে ৫৭ শতাংশ বেশি টাকা চাওয়া হয়েছে। এক প্রকল্পের আওতায় এতো বেশি বাড়তি বরাদ্দ চাওয়ায় ঢাকা ওয়াসার প্রতি ক্ষুব্ধ পরিকল্পনা কমিশন। শুধু বাড়তি বরাদ্দ নয় প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদও বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

শুরুতে এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। জাইকা দেবে ৩ হাজার ৪৯৯ কোটি এবং ওয়াসা দেবে ১০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে সম্পন্ন হওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৮ হাজার ২৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ার প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসা জানায়, সেকেন্ডারি ৫০ কিলোমিটার ডিস্ট্রিবিউশন লাইন, ৫০টি নতুন গভীর নলকূপ স্থাপন, ডিমারকেশন পিলার, সীমানা প্রাচীর, ভূমি উন্নয়ন, নলকূপ স্থাপন সুপারভিশন কাজে ব্যক্তি পরামর্শক, পানি শোধনাগারের জন্য নিরাপত্তা কর্মী ভাড়া, ইন্টারনেট, ফ্যাক্স ও টেলিফোন ব্যয় বাবদ এই বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটি চারটি প্যাকেজ নিয়ে গঠিত। প্রকল্পের প্রধান কাজ দৈনিক ৫০ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জে গন্ধর্বপুরে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা।  একই সঙ্গে নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার মেঘনা নদীর তীরে বিশ্বনন্দী পয়েন্টে ১০৫ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন  ইনটেক নির্মাণ করা। প্রকল্পের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সব মিলিয়ে সময় লেগেছে সাড়ে তিন বছর। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করতে আরো এক বছর লাগবে। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে ২০২২ সালের জুন পযর্ন্ত।

বাড়তি বরাদ্দ ও সময় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পটি চারটি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ শুরু করেছি এই প্যাকেজে ১২শ কোটি টাকা বাড়তি লাগছে। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ ব্যয় শুরুতে ৩০০ কোটি টাকা ছিল এখন বেড়ে ৮০০ কোটি হয়েছে। অনেক জিনিস পত্রের দাম বাড়ার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।’

উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৪৫ থেকে ২৫০ কোটি লিটার। ২২৫ থেকে ২৩০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হয় ঢাকা শহরে। ফলে প্রতিদিন ঢাকাতে পানির ঘাটতি থাকছে প্রায় ২০ কোটি লিটার। ঘাটতি মেটানোর জন্য ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট (ডিএএসডাব্লিউএসপি) শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন আরো বাড়তি ৫০ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি ঢাকাতে সরবরাহ করার কথা। এ প্রকল্পের আওতায় মেঘনা নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি নারায়ণগঞ্জ জেলার বিশ্বনদী, আড়াইহাজার রুপগঞ্জ হয়ে গন্ধার্বপুর এলাকায় ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করা। এখান থেকে প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পরিশোধিত পানি পাওয়ার কথা।