শীতকাল যেমন পরিচিত ভুরিভোজের জন্য, তেমনি নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মাত্রাও কিন্তু বেড়ে যায় এই সময়েই। কারণ শীতকালে তাপমাত্রা এত কমে যায় যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আর এই সব ব্যাকটেরিয়ারা জন্ম নেওয়ার পর চুপ করে বসে থাকবে না।

ফলে বছরের এই সময় নানাবিধ রোগের প্রকোপ বাড়ে চোখে পরার মতো। আর এমনটা হয় বলেই শীতকালে সুস্থ থাকতে নিয়মিত টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। রোজকার ডায়েটে এই সবজিকে জায়গা করে দিলে শরীরে বিভিন্ন উপকার মিলবে। তবে চলুন জেনে নিই সেই সম্পর্কে-

১. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে টমেটোতে উপস্থিত ভিটামিন এ, ফ্লেবোনয়েড, থিয়ামিন, ফোলেট এবং নিয়াসিন শরীরে প্রবেশের পর দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে একাধিক চোখের রোগকে দূরে রাখতেও এই উপদানগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে
টমেটোয় উপস্থিত মিনারেল এবং ভিটামিন শিরা-ধমনীর উপর রক্তের প্রেসার কমতে সাহায্য করে। ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৩. ক্যানসারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে
টমেটোতে উপস্থিত লাইকোপেন প্রস্টেট, কলোরেকটাল এবং স্টমাক ক্যানসার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। লাইকোপেন হলো একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা কোষের বিভাজন ঠিক মতো হতে সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যানসার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমে।

৪. স্কিন টোনের উন্নতি ঘটে
টমেটোয় উপস্থিত লাইকোপেন ত্বকের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
নিয়মিত ১-২ করে টমেটো খাওয়া শুরু করলে শরীরে ভিটামিন সি’র মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এই ভিটামিনটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করে।

৬. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে টমেটোতে উপস্থিত নানাবিধ উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর পাকস্থলির কর্মক্ষমতা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে হজম সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সমস্যা কমতে একেবারেই সময় লাগে না। সেই সঙ্গে কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপও হ্রাস পায়।

৭. হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
টমাটোয় উপস্থিত ভিটামিন বি এবং পটাশিয়াম, শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই সঙ্গে রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

৮.ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি দূর হয়
রক্তিম বর্ণের গোলগাল এই সবজিটির ভেতরে শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি ভিটামিনের সন্ধান পাওয়া যায়। যেমন ভিটামিন এ, কে, বি১,বি৩,বি৫,বি৭ এবং সি। সেই সঙ্গে টমাটোর শরীরে প্রচুর মাত্রায় মজুত থাকে ফলেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিঙ্ক এবং ফসফরাসের মতো খনিজও।

৯. ত্বকের বয়স কমে
আপনার বয়স কি ৩০ পেরিয়েছে? তাহলে প্রতিদিন টমেটোর রস লাগানো শুরু করুন মুখে। কারণ এই বয়সের পর থেকেই নানা কারণে ত্বক বুড়িয়ে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বলিরেখা প্রকাশ পাওয়ার কারণে সৌন্দর্য কমে চোখে পরার মতো। কিন্তু যদি টমেটোকে কাজে লাগান, তাহলে ত্বকের এমন খারাপ অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।

১০. ত্বকের অন্দরে জমে থাকা ময়লা বেরিয়ে যায়
ত্বক জমে থাকা ময়লা থেকে বাঁচাতে অ্যাভোকাডোর সঙ্গে টমেটোর রস মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার মেলে। আসলে এই দুই প্রকৃতিক উপাদান একদিকে যেমন ত্বকের অন্দরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। সেই সঙ্গে ত্বককে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করে তোলে।

১১. হাড় মজবুত করে
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-কে সমৃদ্ধি হওয়ার কারণে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে টমেটোর কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই বুড়ো বয়সে অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগের হাত থেকে বাঁচতে এখন থেকেই টমাটো খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন।