রফিকুল ইসলাম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈষম্য মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পর্কে ‘নেতিবাচক মানসিকতা ’ পরিহার করার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কানাকে কানা আর খোড়াকে খোড়া বলো না শৈশব থেকে আমরা এই শিক্ষা পেয়েছি। শিশুদেরকে শৈশব থেকে এই শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা মানবিক হয় এবং যাতে তারা আমাদের সঙ্গে একত্রে চলতে পারে- এটিই সবচেয়ে বড় কথা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যাপারে আমাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

গতকাল রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে ২৮তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস ২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন কমপ্লেক্স ‘সুবর্ণ ভবন’ উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের জন্য সব মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তার সরকার বৈষম্য মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য স্বাধীনতা নিয়ে এসেছেন। আমাদের লক্ষ্য হলো এই স্বাধীন দেশের সকল জনগণ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে এবং আমরা এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছি।

অটিজম অথবা প্রতিবন্ধীতা কোন রোগ অথবা অসুস্থতা নয় এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যাতে অটিজম অথবা প্রতিবন্ধীতায় যারা ভুগছেন তারা সমাজের মূলধারার সঙ্গে বসবাস করতে পারেন। আমরা জানি যে, এ ধরনের প্রতিবন্ধীতায় যে সব শিশুরা ভুগছেন তাদের পিতা মাতার জন্য এটি খুবই বেদনাদায়ক। আমরা তাদের এই দুর্দশা নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।

দেশের ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এই উন্নয়নে প্রতিবন্ধীদের ওপর জোর গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা চাই দেশের উন্নয়ন এবং আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গুরুত্ব দিচ্ছি যাতে তারা উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে না থাকে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অধিদফতর প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল, এটা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফাউন্ডেশনকে অধিদফতর করে কোনও লাভ নাই। এটা থাকলে পরে সুবিধা হলো অনেকে অনুদান দেয়, অবদান রাখে। অধিদফতর হলে প্রতিবন্ধীদের কোনও সুবিধা হবে না, লাভ হবে কিছু সরকারি কর্মকর্তার। তারা আরেকটু প্রমোশন পাবে, একটু পদায়নের জায়গা পাবে। কাজেই ফাউন্ডেশন যদি থাকে, তাহলে একটু আর্থিক সহায়তা আসবে, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা হবে, আমরা মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করতে পারবো। মানুষ সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারবে। সব বেসরকারি ব্যাংককে বলা আছে, তারা সমাজকল্যাণের কাজে টাকা ব্যয় করে। এসব খাত থেকেও প্রতিবন্ধীদের জন্য টাকা আসবে। কাজেই ফাউন্ডেশনকে অধিদফতর করলে সরকারি অফিসারদের লাভ হবে, কিন্তু প্রতিবন্ধীদের কতটুকু লাভ হবে, আমি জানি না। কারণ তাদের হাতে জিম্মি হয়ে যেতে হবে। ফাউন্ডেশনকে অধিদফতর করা ঠিক না।

তিনি বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সরকারের পতিত জমি খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব জমির তালিকা করতে পারলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলা, প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। জাতীয় প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স ‘সুবর্ণ ভবনে’ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান, বিনোদন এরকম বিভিন্ন কাজের সুযোগ থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদের পাশে প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের প্র্যাকটিসের একটা জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে। সাভারে একটা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধীরাই বেশি ভালো করছে। গত বছর বিভিন্ন খেলাধুলায় তারা ৩৩টি স্বর্ণ এনেছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের সব প্রতিবন্ধী ও তাদের পরিবারসহ সবাইকে প্রতিবন্ধী দিবসের শুভেচ্ছা জানান। কপি ইনকিলাব থেকে