জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় ফল চ্যালেঞ্জের আবেদন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাপ্ত ফলাফলে অসন্তোষ হয়ে এবার ফল চ্যালেঞ্জ করে ১ লাখ ২৫ হাজার ৬৩টি আবেদন জমা পড়েছে। এতে শিক্ষা বোর্ডের আয় হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৩২ হাজার ৮৭৫ টাকা। গত বছর আবেদনের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৭০৫টি। এবার ২১ হাজার ৩৫৮টি আবেদন বেশি জমা পড়েছে।

শিক্ষ বোর্ডগুলো সূত্রে জানা গেছে, এবার আবেদনের শীর্ষে রয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বিষয়ভিত্তিক আবেদনের শীর্ষে রয়েছে গণিত ও ইংরেজি। সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ৭৮ বা ৭৯ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। ১ বা ২ নম্বর পেলে পরবর্তী গ্রেড অর্থাৎ জিপিএ-৫ পাওয়া যাবে এমন আশায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। 

বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ করার পরিমাণ বাড়ছে। পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে প্রচুর শিক্ষার্থী তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেয়েছে। খাতা মূল্যায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে আবেদন সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমননি ফল পরিবর্তনের সংখ্যাও বাড়ছে। আবেদন করা অভিভাবক ও পরীক্ষাথীদের ধারণা পুনঃনিরীক্ষণে এক বা দুই নম্বর বাড়লেই ফেল থেকে পাস কিংবা পরবর্তী গ্রেড পেয়ে যাবেন। আবার অনেকে জিপিএ-৫ বা সকল বিষয়ে জিপিএ-৫ পাবেন। তবে বোর্ড কর্মকর্তাদের দাবি সকল বিষয়ে নম্বর দেখার সুযোগ করে দেওয়ার কারণেই আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে। তবে বিষয় প্রতি পরীক্ষার্থীদের ১২৫ টাকা করে ফি দিতে হয়েছে। এতে শিক্ষা বোর্ডের ১ কোটি ৫৬ লাখ ৩২ হাজার ৮৭৫ টাকা আয় হয়েছে।

বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কিনা এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয় বলে বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তার মানে কোনো শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ন হয় না।

শিক্ষ বোর্ডগুলো সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বোর্ডে এবার ৩৯ হাজার ৫০৩ জন পরীক্ষার্থী ৫৪ হাজার ৬২৯টি বিষয়ের ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছেন। এ বোর্ডে ১৬ হাজারের বেশি ইংরেজি বিষয়ে আবেদন জমা পড়েছে। কুমিল্লা বোর্ডে ৯ হাজার ৮৩৪ জন পরীক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে মোট ১২ হাজার ৫৯০টি আবেদন করেছে। এরমধ্যে ইংরেজিতে ৩ হাজার ৬৪টি, বাংলায় ১ হাজার ৮৮২টি, গণিতে ১ হাজার ৮৬৪টি, ধর্ম (ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং খ্রিস্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা) বিষয়ে ৯০৬টি, বিজ্ঞানে ২ হাজার ৪৫টি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ৮১৮টি, বাংলাদেশে ও বিশ্ব পরিচয়ে ২ হাজার ২৬৮টি।

বরিশাল বোর্ডে ৩ হাজার ৮ জন পরীক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে মোট ৪ হাজার ২৬০টি আবেদন করেছে। এরমধ্যে গণিতে ৬৭৪টি, ইংরেজিতে ৭৫০টি, বাংলায় ৩৬২টি, বিজ্ঞানে ৮৪৭টি, বাংলাদেশে ও বিশ্বপরিচয়ে ৭৭২টি, আইসিটিতে ৩৬২টি, ধর্মে ৩৯০টি। সিলেট বোর্ডে বিভিন্ন বিষয়ে ৪ হাজার ২৬০টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে বাংলায় ৯০৭টি, ইংরেজিতে ৭৮৮টি, গণিতে ৬৮২টি, ধর্মে ২৬৩টি, বিজ্ঞানে ৮২০টি, বাংলাদেশে ও বিশ্ব পরিচয়ে ৬২১টি, আইটিতে ১৭৮টি আবেদন করেছে শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লা বোর্ডে ৯ হাজার ৮৩৪ শিক্ষার্থী মোট ১২ হাজার ৫৯০টি আবেদন করেছে। এরমধ্যে ইংরেজিতে ৩ হাজার ৬৪টি, বাংলায় ১ হাজার ৮৮২টি, গণিতে ১ হাজার ৮৬৪টি, ধর্মে ৯০৬টি, বিজ্ঞানে ২ হাজার ৪৫টি, বাংলাদেশে ও বিশ্ব পরিচয়ে ২ হাজার ২৬৮টি, আইসিটিতে ৮১৮টি। দিনাজপুর বোর্ডে ৮ হাজার ৩৩৩ জন শিক্ষার্থী মোট ১০ হাজার ১১১টি আবেদন করেছে। এর মধ্যে গণিতে ২ হাজার ৮০৬টি, ইংরেজিতে ১ হাজার ৯৭১টি, বাংলায় ১ হাজার ১৬১টি, বিজ্ঞানে ১ হাজার ১১টি, বাংলাদেশে ও বিশ্ব পরিচয়ে ২ হাজার ১৩টি, আইসিটিতে ২৯৯টি ও ধর্মে ৭৪৯টি। চট্টগ্রাম বোর্ডে ১১ হাজার ২৪ জন শিক্ষার্থী মোট ১৪ হাজার ৫৮৭টি আবেদন করেছেন। এরমধ্যে ইংরেজিতে ২ হাজার ৯৪৯টি, গণিতে ৩ হাজার ৯০৫টি, বাংলায় ৫৪৪টি। যশোর বোর্ডে ৮ হাজার ৮৭৩টি আবেদন জমা পড়েছে।

প্রথমবারের মতো চলতি বছর পাবলিক পরীক্ষা নেয়া ময়মনসিংহ বোর্ডে তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ সামসুল ইসলাম বলেন, এটা সমন্বয় করে টেলিটক। তারা এখনও আমাদের তথ্য দেয়নি। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা ১০ হাজার ৪৫টি আবেদন করেছে। এর মধ্যে কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ বিষয়ে ৭৭৯টি, আরবি ১ হাজার ১৫০টি, বাংলায় ৭৭৭টি, ইংরেজিতে ১ হাজার ৮২২টি, গণিতে ১ হাজার ৪৮০টি, বিজ্ঞানে ৯৪৬টি, আইটিসিতে ৩৮১টি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৯৮০টি, আকাইদ ও ফিকহ বিষয়ে ৩০৩টি।