তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে এবং সফল হওয়ার কলাকৌশল শেখাতে কালের কণ্ঠের অনলাইনে শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক আয়োজন ‘আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখো।’ সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামাল নিয়মিত লিখছেন। স্বপ্ন দেখাবেন তরুণদের। স্বপ্ন আর আশাজাগানিয়া লেখা পড়ুন কালের কণ্ঠ অনলাইনে।

এমনি এমনি কি মানুষ বড় হয়? নাকি বড় হওয়ার জন্য তাকে কিছু করতে হয়? কাজ মানুষকে বড় করে, নাকি ভাগ্য? এ নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক বিতর্ক আছে। কেউ বলেন, ভাগ্যে না থাকলে কিছুই হয় না। আবার কেউ বলেন, কাজই মানুষকে বড় করে। আসলে কোনটা ঠিক? মানুষ বড় হয় কি ভাগ্যের গুণে; নাকি কাজের বদৌলতে?

আরো অনেক প্রশ্ন আমাদের সামনে এসেছে। কেউ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে? কাজ নাকি ভাগ্য? কেউ বলেন কাজ, আবার কেউ বলেন ভাগ্য। ছোটবেলায় দুজন একই ক্লাশে পড়ে কেউ হয় দেশের রাষ্ট্রপতি, আর কেউ হয় কামলা। তাহলে ভাগ্যের গুণে কেউ রাষ্ট্রপতি আর ভাগ্যের ফেরে কেউ কামলা? এর ব্যাখ্যা কি?

কাজ করতে গিয়ে বার বার যখন মানুষ ব্যর্থ হয় কিংবা গভীর সংকটে পড়ে তখন মানুষ বলতে থাকে, কপালের ফেরে আজ আমার এই দশা! সেটা যে তার কর্মফল তা কেউ মনে করেন না। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করা কিংবা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলেও যে কেউ সংকটে পড়তে পারেন তা কেউ মনে করেন না। 
আমরা যদি বিশ্বজয়ী অনুর্ধ্ব উনিশ ক্রিকেট দলের উদাহরণ দিই তাহলে হয়তো অনেকে বুঝতে পারবেন বিষয়টি কী। অনুর্ধ্ব উনিশের প্রত্যেক ক্রিকেটারই কিন্তু অজপাড়াগাঁ থেকে উঠে আসে। এদের বাবারা কেউ কৃষক, কেউ ক্ষতমজুর, কেউ বা হতদরিদ্র শ্রমিক। অথচ তারাই এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে অসামান্য সম্মান। যা আগে কখনো কেউ এনে দিতে পারেনি। তারা ক্ষেতে-খামারে খেলাধুলা করেই এ পর্যন্ত এসেছে। পরে ঢাকায় তালিম নিয়ে নিজের তৈরি করেছে। তারা সাহসের বলে বলিয়ান হয়ে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়েছে। তারা কি ভাগ্যের গুণে জিতে এসেছে? নাকি ভালো খেলে ভারতকে হারিয়েছে?

নিশ্চয়ই সবাই বলবেন ভালো খেলেই ভারতকে হারিয়েছে। তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার। কাজই মানুষকে বড় করে। একটা ইমারত গড়তে ইটের পর ইট গাঁথতে হয়। তারপর ধীরে ধীরে একতলা, দুই তলা তিনতলা করতে করতে বিশাল একটা ইমারত মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। বড় মানুষ হওয়ার জন্যও সে রকমভাবে তিল তিল করে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়। 

একটা ইমারত গড়ার শুরুতে নকশায় ভুল হলে যেমন সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তেমনি মানুষের জীবনের শুরুতে স্বপ্ন বুনতে না পারলেও এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। জীবনের লক্ষ্য স্থির করে এগোতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। 

কথায় আছে না, ঠেকে ঠেকে মানুষ শেখে। কোথাও ব্যর্থ হলে সেখান থেকেই শিক্ষা নিতে হয়। ব্যর্থ হয়ে হতাশ হয়ে গেলে আর এগোনো যায় না। আরেকটা ব্যাপারে বলা দরকার বলে মনে করি। কোনো ছোট মনের মানুষ কখনো বড় হতে পারে না। 

বড় মানুষ হতে হলে বড় মন থাকতে হবে। বড় স্বপ্ন বুনতে হবে। ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবন অনেক বড়। কাজেই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বড় বিষয় নিয়ে ভাবুন। দেখবেন, জীবনের মোড় ঘুরে যাবে। 

কাজকে ভালোবাসুন এবং সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন। কাজই আপনার ভাগ্যের দরজা খুলে দেবে। কাজই আপনাকে অনেক বড় জায়গায় নিয়ে যাবে। 

লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কালের কণ্ঠ ও সাহিত্যিক।