রেলপথে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে সমান্তরাল আরেকটি রেল সেতু নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল এখন থেকে চার বছর আগে ২০১৬ সালে। তখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। চার বছর পর এসে সরকার এখন প্রকল্পটি সংশোধন করে এর ব্যয় বাড়িয়েছে ৭২ শতাংশ। সে হিসাবে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৯৮০ কোটি টাকায়। যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ করার কথা ছিল ২০২৩ সালে; সেটির মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চলমান ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পেছনে যুক্তি তুলে ধরে একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, নির্মাণকাজের দরপত্র বা প্যাকেজ ১ ও প্যাকেজ ২-এর মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বেড়েছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জাইকা নতুন করে প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখেছে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে। এ কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। এই প্রকল্পে বাড়তি চার হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ দিতে জাইকা সম্মত হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। এর আগে ৯ জানুয়ারি সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি শর্তসাপেক্ষে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে তখন অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের খরচও বাড়ছে।
গতকাল একনেক সভা শেষে প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনাসচিব নূরুল আমিন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস এবং কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মো. জাকির হোসেন আকন্দ।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সংশোধনীসহ মোট আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি নতুন এবং দুটি সংশোধিত প্রকল্প। নতুন ছয় প্রকল্পের খরচ হবে তিন হাজার ৩৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ ছাড়া সংশোধিত দুটি প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে সাত হাজার ৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে শুধু একটি প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তা রয়েছে।
এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে ৩০০ মিটার উজানে এই সেতু নির্মাণ করা হবে। ডুয়াল লাইন রেল সেতু হবে এটি। সেতুটি সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বাড়াবে। পরিকল্পনা কমিশনের দেওয়া তথ্য মতে, চার বছরে এই প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৯ শতাংশ।
এদিকে গতকালের একনেকে পাস হওয়া অন্য সংশোধিত প্রকল্প ‘রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী-২’। প্রকল্পের খরচ ৪০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকায়।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৭৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরি পানি সরবরাহ প্রকল্প, ৭৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আমিন বাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প, ২৬৭ কোটি টাকা খরচে শেখপাড়া (ঝিনাইদহ)-শৈলকুপা লাঙ্গলবাঁধ-ওয়াপদা মোড় জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতকরণ প্রকল্প, ৪৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার মুন্সীগঞ্জ থেকে খানপুরা এবং কাজিরহাট থেকে রাজধরদিয়া পর্যন্ত যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, ৫৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুড়িগ্রাম জেলার সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলাধীন ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এবং ৫৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ও শাজাহানপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্প।