বর্তমানে করোনা আতঙ্কে গোটা দেশ অচল। সাংবাদিক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ডাক্তার ছাড়া সবাই ছুটিতে। সবাই ঘরবন্দি। সারাক্ষণ ব্যস্ত সময় কাটানো মানুষগুলো যখন ঘরে বন্দি থাকে, তখন তাদের মনের অবস্থা ভালো থাকে না। এ পরিস্থিতি অনেককেই অস্থির করে তোলে। যেহেতু আমরা অত্যন্ত সংকটময় একটি মুহূর্ত পার করছি, তাই ঘরে থেকে সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তিগফার করতে পারি। নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, সদকা ও রোজা রেখে মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে পারি।
পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে ভালোবাসা গভীর করার এটি একটি উপযুক্ত সময়। এ সময় ঘরে স্মার্টফোন কিংবা টিভি নিয়ে অলস সময় কাটানোর চেয়ে পরিবারকে সময় দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। এর মাধ্যমে যেমন পারিবারিক সম্পর্ক দৃঢ় হবে, তেমনি সাওয়াব অর্জন হবে।
পরিবারকে সময় দেওয়া, পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যক্তিজীবনে অবসর সময়ে পরিবারবর্গকে পারিবারিক কাজে সহায়তা করতেন। নিজের কাজ নিজেই করতেন। হজরত আসওয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে রাসুল (সা.) ঘরের মধ্যে কী কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, তিনি ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন, অর্থাৎ গৃহস্থালি কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো নামাজে চলে যেতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৭৬)। উভয় জাহানের বাদশাহ সত্ত্বেও রাসুল (সা.) যে কতটা নমনীয় ছিলেন এবং কত সাধারণ কাজও স্বহস্তে করেছেন, বিভিন্ন হাদিসের স্বর্ণখচিত শব্দে তার বিস্তর ধারণা পাওয়া যায়। ইরশাদ হচ্ছে, হজরত কাসেম (রহ.) বলেন, আমি একদা হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুল (সা.) ঘরের মধ্যে কী কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, তিনি অন্যান্য মানুষের মতোই একজন ছিলেন, নিজের কাপড়ের উকুন পরিষ্কার করতেন, বকরির দুধ দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন। (মুসনাদে আহমদ : ২৬১৯৪)। অন্য বর্ণনায় আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি স্বীয় কাপড় নিজেই সেলাই করতেন, নিজের জুতা নিজেই মেরামত করতেন এবং সাধারণ মানুষের মতোই ঘরের কাজকর্ম করতেন। (মুসনাদে আহমদ : ২৪৯০৩)। পরিবারের প্রতিটি কাজই আমাদের নিজেদের কাজ, যা আমরা ভাগাভাগি করে করলে একদিকে যেমন পরিবারের সবার মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা, ভালোবাসা বজায় থাকবে, অন্যদিকে রাসুল (সা.)-এর একটি বিশাল সুন্নাতও উজ্জীবিত হবে; যা আমাদের সমাজ-সংসার থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে। তা ছাড়া সুন্নাতের নিয়তে পরিবার কেন যে কারো খেদমত করলেই সার্বক্ষণিক সাওয়াব লিপিবদ্ধ হতে থাকে। ইরশাদ হচ্ছে, যে ব্যক্তি উম্মতের অধঃপতনের সময় একটি সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে সে ১০০ শহীদের সাওয়াব পাবে। (আল কামেল : ৩/১৭৪)। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মুসলমানদের মধ্যে কোনো একটি ভালো সুন্নাতের প্রসার করবে, সে ওই আমলকারীদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে, এ ক্ষেত্রে আমলকারীদের সাওয়াবও বিন্দু পরিমাণ কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি মুসলমানদের মধ্যে কোনো একটি খারাপ কাজের প্রসার করবে, সেও ওই কুকর্মে জড়িতদের সমপরিমাণ গুনাহের অংশীদার হবে, এ ক্ষেত্রেও অপকর্মে লিপ্তদের গুনাহ বিন্দু পরিমাণ কমানো হবে না। (মুসলিম, হাদিস : ১০১৭)।
তাই হোম কোয়ারেন্টিনের এই সময়কে আমরা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাতের মাধ্যমে সোনালি করে তুলতে পারি। পাশাপাশি অন্যকেও এই সুন্নাতের ব্যাপারে উৎসাহী করতে পারি। এতে পরিবারের সঙ্গে কাটানো এই অলস সময়গুলো যেমন মধুর হবে, তেমনি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই বিশেষ সুন্নাতটি পালন করার তাওফিক দান করুন।