ইবাদত ও আমলের ক্ষেত্রে সংখ্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ দুই, তিন ও চার রাকাত করে পড়তে হয়। প্রতিদিন দুই ও চার রাকাত করে মোট ১২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ পড়তে হয়।
আবার রমজানের ২৯ বা ৩০ দিন রোজা রাখতে হয়। কিন্তু এসব সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়টি মোটেও কাকতালীয় নয়। এর পেছনে আছে বিশেষ হেকমত। শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভি (রহ.) লিখেছেন, ইবাদতের জন্য সময় ও পরিমাপ নির্ধারণ করা হয় বিশেষ মূলনীতির আলোকে। এসব মূলনীতির একটি হলো বিজোড় সংখ্যা। ইসলামের দৃষ্টিতে বিজোড় একটি সম্মানিত সংখ্যা। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী হলো, ‘আল্লাহ তাআলা বিজোড়; তিনি বিজোড় পছন্দ করেন, অতএব হে পবিত্র কোরআনের ধারক ও বাহকরা, তোমরা বিতরের নামাজ আদায় করো।’ (মিশকাত, হাদিস ১২৬৬)
এই এক বা বিজোড় হচ্ছে মূল এককের ভিত্তি। মূল একক হলেন মহান আল্লাহ। আর এ এককটি মূল এককের উত্তরাধিকারী। আর বিজোড় সংখ্যার মধ্যে একক বিদ্যমান রয়েছে। আর সে একক হচ্ছে এ সংখ্যাটিকে সঠিকভাবে সমান দুটি এককে ভাগ তথা বিভাজন করতে না পারা। আর জোড়ের তুলনায় এককটি বিজোড়ের কাছাকাছি। প্রতিটি বস্তুর স্বীয় মূলের দিকে প্রত্যাবর্তনই আল্লাহ তাআলার দিকে প্রত্যাবর্তনের নামান্তর। কারণ আল্লাহ তাআলা সব ভিত্তির উৎপত্তি, সূচনা ও উৎস। আল্লাহর সত্তাই একমাত্র পরিপূর্ণ একক। আবার কখনো কখনো এই এককের কোনো উচ্চতর, ঊর্ধ্বতন ও উত্কৃষ্ট সংখ্যা গ্রহণ করা হয়। যেমন—একের উন্নতি হয় ১ থেকে ১০ এবং ১০ থেকে ১০০-এর দিকে। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা)। তাই আল্লাহর ওপর পূর্ণ ঈমান এবং আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিতে প্রতিদিন ১০০ বার কিছু আমল করতে বলা হয়েছে। এমন আমল পাঁচটি। যেমন—
প্রতিদিন ১০০ বার এই দোয়া পড়তে বলা হয়েছে—
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সব প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
উপকার : আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার এ দোয়া পড়বে, তার ১০টি গোলাম আজাদ করার সওয়াব হবে। তার জন্য ১০০ পুণ্য লেখা হবে এবং ১০০ গুনাহ মিটিয়ে ফেলা হবে। ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে রক্ষিত থাকবে। কোনো মানুষ তার চেয়ে উত্তম সওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ওই ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে তার চেয়ে এই আমল বেশি পরিমাণে করবে।
(বুখারি, হাদিস ৩২৯৩)
সকালে ও বিকালে ১০০ বার করে ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করুন। এতে মহান আল্লাহ আপনাকে (কিয়ামতের দিন) সৃষ্টিকুলের সব মানুষ থেকে বেশি মর্যাদা দান করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস ৫০৯১)
সকালে ১০০ বার ও সন্ধ্যায় ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করুন। এতে কিয়ামতের দিন আপনার চেয়ে বেশি সওয়াব নিয়ে আর কেউ উপস্থিত হতে পারবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৬৫৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার আর ৯৯ বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’, তার গোনাহগুলো সাগরের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস ৪৯০৬)
দৈনিক ১০০ বার তাওবা ও ইস্তেগফার করা সুন্নাত। নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি দিনে ১০০ বার তাওবা করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৭০৩৪)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।