মুক্তিযুদ্ধ বাঙালী জাতির গর্ব এবং মুক্তিযোদ্ধারা বাংলার অলংকার। মুক্তিযুদ্ধ মানেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানেই শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ মুজিবুর রহমান মানেই স্বাধীন বাংলাদেশ, আর বাংলাদেশ মানেই হচ্ছে প্রবৃদ্ধিশীল অর্থনীতি।
বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই বাঙালি জাতির। নাগরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক কোন দিকেই মহানায়ক পথিকৃত বঙ্গবন্ধুকে ভুলার নয়! তাইতো প্রাক্তন কিউবান নেতা “ফিদেল ক্যাষ্ট্রো”অসাধারণ উক্তি করেছিলেন, “আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু দেখেছি বঙ্গবন্ধুকে”।১৯৫২সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সব কিছুই চেতনার বাসনাকে মানুষের সামনে তুলে ধরে। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের অতি গুরুত্বপূর্ণ ভাষন পুরো জাতিকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনাই ছিল বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার মূল সারমর্ম। মহান নেতার কন্ঠ থেকে বেরিয়ে এসেছিল, “আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের উপর আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ করে তোল, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে”। আরো বলেছিলেন,এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। ছয় দফার কারণে ওনি বার বার গ্রেফতার হন। মহান নেতাকে প্রধান আসামী করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজু করা হয়। পরে, জনগণের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন আইয়ুব খান মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য হন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি অমানবিক মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও অন্যায় অত্যাচার কিন্তু থেমে থাকেনি। অতঃপর একই সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে “বঙ্গবন্ধু”উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তখন সমগ্র পাকিস্তানের ৩০০ টি আসনের মধ্যে সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ১৬৯টি আসন পূর্ব পাকিস্তান(বাংলাদেশ) এর জন্য বরাদ্দ ছিল। জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দল মোট ১৬৭ টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০ টি আসনের মধ্যে ২৯৮ টি আসন লাভ করে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় সরকার গঠন করতে যাচ্ছে এই কারণে বর্বর প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। নেতা বলে কথা, ওনার ডাকে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত স্বতস্ফূর্ত ভাবে অসহযোগ আন্দোলন পরিচালিত হয়।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে বাঙালির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান জানান এবং উচ্চস্বরে বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। ২৫ মার্চ মধ্য রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় ওই ভয়ংকর কালরাত্রিতেই যা বাঙালি জাতির শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকা পর্যন্ত ভুলবে না, ভুলা সম্ভবও না।
তারপর, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ঐতিহাসিক কালরাত, যার স্মৃতি আজও সচেতন মানুষ বুকে নিয়ে অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় লড়ছে। ওই ভয়ংকর কালরাত্রিতেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার পরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার। মহান মুক্তিযুদ্ধের ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে।
তার দুদিন আগে অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ডাক্তার, শিল্পী, সাংবাদিক, লেখকদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, যদিও ২৫ মার্চ থেকেই বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয়।১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক বৈষম্য শুরু হয়। রাজস্ব খাত, উন্নয়ন খাত, বৈদেশিক সাহায্য, বৈদেশিক দ্রব্য আমদানি, কেন্দ্রীয় সরকারে চাকুরি, সামরিক বিভাগে চাকুরি ইত্যাদি ছিল প্রধান টার্গেট।পরে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বন্দিদশা থেকে বেড়িয়ে লন্ডন, ভারত হয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে নতুন করে সোনার বাংলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে ভারত সহ ১০৪ টি দেশ বাংলাদেশকে তাৎক্ষনিক স্বীকৃতি প্রদান করেন। সাথে সাথে জাতিসংঘ, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন ও ইসলামী সম্মেলন সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ এবং ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু “জুলিও কুরী”পদক লাভ করেন। পরিশেষে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী অমানুষের গুলিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে শহীদ হন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে প্রবর্তিত হয় বঙ্গবন্ধু শান্তি পদক। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই মহান নেতাকে স্মরণ করে আমার লেখা চতুর্দশ পদি কবিতা বঙ্গবন্ধু তথা বিশ্ববন্ধুকে উৎসর্গ করলামঃ
“বঙ্গবন্ধুর স্মরণে”
জনের রক্তে,যতদিন থাকবে প্রাণ,
লক্ষ বছর, “বঙ্গবন্ধু”র জয়গান,
যত বৎসর রবে, সমুদ্র বহমান,
ততকাল,”শেখ মুজিবুর রহমান”,
জন্মে ধন্য, “বঙ্গবন্ধু”র আত্মসম্মান,
যদি ‘শঠ’করতে চায়, ন্যায়কে ম্লান,
নিশ্চিত ধ্বংস, সেই পাপিষ্ঠ শয়তান,
হে “নর”মনে রেখো,পিতার অবদান,
তিনি যে বাংলাদেশের,জয়ী কীর্তিমান,
গর্বিত জাতি মোরা, তিনি সব নির্মাণ,
সর্বস্রেষ্ঠ বাঙালিকে, করেছে মহান,
বাংলাদেশ স্বাধীন,হয়েছে কান্তিমান,
“বঙ্গবন্ধু”পায় “জুলিও কুরী”সন্মান,
কৃতজ্ঞ মোরা, তিনি অনন্ত বুদ্ধিমান।
যে মানুষটা নিজের ইজ্জত, জীবন বাজি রেখে আপনাদের জন্য এতো কিছু করলেন, আর সেই মানুষটাকেই স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করলেন!! আপনারা কি মানুষ না অন্য কিছু! এই পাপ মোচন করা কোন ভাবে, কোন কালেই সম্ভব নয়! এই পাপের বোঝাই করা মানুষই আজ আমাদের অভিশাপ। এই সবকিছু বলার অর্থ হচ্ছে মানুষের মনে চেতনা ও সচেতনতা জাগ্রত করা। কারণ, অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে আমাদের আজকের অর্থনীতি যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলারই একটা অংশ। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও অর্থনীতির উপরেই বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।তাই, বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখে সচেতনতা ও নিরাপদ দূরত্ব মেনেই আমাদেরকে অদৃশ্য ভাইরাসের মোকাবেলা করতে হবে।
আরো বলি, আমরা সচেতন নই, কখনো ছিলাম না। এখনো