সাগরে থেকে একের পর এক ভেসে কক্সবাজার উপকূলে আসছে আঘাতপ্রাপ্ত মৃত ডলফিন। বৃহস্পতিবার (২১ মে) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দেখা যায় বিশাল আকৃতির দুটি মৃত ডলফিন। যাদের গায়ে ও মাথায় ছিল আঘাতের চিহ্ন। সাগরের এই নিরীহ প্রাণী রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ না থাকায় বার বার উপকূলে আঘাতপ্রাপ্ত মৃত ডলফিন ভেসে আসছে বলে দাবি পরিবেশবাদীদের।
বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, বালিয়াড়ীতে পড়ে রয়েছে একটি বিশাল আকৃতির মৃত ডলফিন। যার পেটে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সেটি খাচ্ছে কুকুর ও কাকের দল।
সৈকতের সি-সেইভ লাইফগার্ডের কর্মী ভুট্টো খান বলেন, বুধবার সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে দুটি মৃত ডলফিন ভেসে থাকতে দেখা যায়। যা পরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে জোয়ারের পানিতে ভেসে বালিয়াড়ীতে পড়ে থাকে। দুটিই বড় আকৃতির মৃত ডলফিন। এরমধ্যে একটি জোয়ারের পানিতে পুনরায় সাগরে ভেসে যায়।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টে অবস্থিত ইয়াছিন লাইফগার্ডের ইনচার্জ সরওয়ার বলেন, বালিয়াড়ীতে আটকেপড়া মৃত ডলফিনের গায়ে লম্বা কাটার দাগ আছে। যেখানে মাছ ধরার জালের টুকরো রয়েছে এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। এই মৃত ডলফিনটি বালিয়াড়ীতে পড়ে থাকলেও দীর্ঘক্ষণ কেউ এটি বালিতে গর্ত করে পুতে ফেলেনি। দৃশ্যটি সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তাও দেখেছেন।
টুরিস্ট পুলিশের এএসআই বিশ্বজিৎ বলেন, সাগর থেকে মৃত অবস্থায় ভেসে আসা ডলফিনটি বালিয়াড়ীতে পড়ে ছিল। পরে এটি গর্ত করে পুতে ফেলা হয়।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো দেওয়া তথ্যমতে, গত দুই মাসে কমপক্ষে ১৪টি ডলফিন সাগরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত অবস্থায় উপকূলে ভেসে এসেছে। মৃত ডলফিনগুলো দেখা যায় টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত উপকূলে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, ‘‘ডলফিন সুরক্ষা নীতি আমরা গড়ে তুলতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। জেলেদের সচেতন কিংবা নির্দেশনা দিতে পারিনি। কোন প্রাণীগুলো কীভাবে সুরক্ষিত করতে হয়; কোন প্রাণী ক্ষতিকর, আর কোনগুলো ক্ষতিকর নয়- এই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছি বলে প্রতিদিনই জেলেদের জালে ডলফিন আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে।’’
তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ডলফিন সুরক্ষার দায়িত্ব বনবিভাগকে দেওয়া হয়। কিন্তু যারা বন, পাহাড় ও পাহাড়ি অঞ্চলের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করেন, তাদের সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষার দায়িত্ব দিলে সেটাতে সফলতা আসবে না।
তিনি মনে করেন, মৎস্য অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় যদি সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে এই প্রাণীগুলো বাঁচানো সম্ভব হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কক্সবাজার উপকূলে এত ডলফিন মারা যাচ্ছে, তারপরও এখনো পর্যন্ত ডলফিন সুরক্ষায় পদক্ষেপ সরকারের কোনো সংস্থার নিতে দেখা যায়নি।
কক্সবাজারের মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান জানান, পৃথিবীর অন্যতম নিরীহ, শান্ত প্রাণীর মধ্যে ডলফিন একটি। মানুষের কথা তারা বুঝতে পারে, ভাষা কিংবা ইঙ্গিতও তারা সহজেই বুঝে নেয়। তারা কাউকে আক্রমণও করে না। ডলফিন কোনো ক্ষতিকর কিংবা আগ্রাসী প্রাণী নয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ডলফিনের মৃত্যুর কারণ তদন্তে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড দিয়ে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা জটিল।
তিনি বলেন, ঈদের পর বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে আলোচনাসভা করা হবে; যাতে সম্মিলিতভাবে সাগরে ডলফিন সুরক্ষায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় নির্ধারণ করা হবে।
গত ২৩ মার্চ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে ডলফিনের দুটি দলকে খেলা করতে দেখা যায়। সেখানে ২০-২৫টি ডলফিন ছিল।