বিশেষ প্রতিনিধি:ফয়সাল আহমেদ
এবারের বাজেটে মোবাইল ফোন সেবার ওপর আরেক দফা কর বাড়ানোর পর তা কার্যকর করেছে সরকার। বাজেট ঘোষণার পর গতকাল দিবাগত রাত ১২টা থেকেই সে ঘোষণা কার্যকর হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে এসএমএস, কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহকদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
এবারের বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে গ্রাহক তার সিমে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৩৩ টাকা ২৫ পয়সা নেবে সরকার। বাজেট ঘোষণার আগে প্রতি ১০০ টাকা রিচার্জে সরকার নিত ২৭ টাকা ৫০ পয়সা। মোবাইল ফোন অপারেটররা এই ব্যয় নিজে বহন না করলে তা গ্রাহকদেরই দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। এতে নতুন করে এই কর বাড়ানো হয়।
নতুন কর মোবাইল ফোন সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ১৫ শতাংশ করায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ ও সারচার্জ ১ শতাংশসহ মোট করভার দাঁড়িয়েছে ৩৩.৫৭ শতাংশ।
মোবাইল ফোন অপারেটররা এবং টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন মোবাইল সেবায় কর বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষ বেশি চাপে পড়বে। গতকাল মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন দেশের অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিকম খাতের অবদান যত উল্লেখযোগ্যই হোক না কেন, সরকার নিয়মিতভাবে প্রতিবছর এই খাতের ওপর আরো বেশি করে করের বোঝা চাপিয়ে একে আরো দুর্বল করে তুলছে; গ্রাহকদের ওপর ফেলছে বাড়তি চাপ। ফলে দেশের জিডিপিতে মোবাইল ফোনের বর্তমান অবদান ৭ শতাংশ থেকে যে দুই অঙ্কের ঘরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল তা আর অর্জিত না-ও হতে পারে।
অ্যামটব মহাসচিব আরো বলেন, এর ফলে গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। এ বিষয়ে এসআরও জারি হওয়ায় তা গতকাল দিবাগত রাত ১২টার পর থেকেই কার্যকর হয়। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এমনিতেই মানুষের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, মোবাইল মাধ্যম হয়ে উঠেছে সব যোগাযোগের মূল চালিকা ও দেশ ডিজিটাল ইকোনমির দিকে এগিয়ে চলছে; ঠিক সে সময় এ ধরনের করের বোঝা কোনোভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে টেলিকম খাতের বাজেটের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবারও অনুরোধ করছি।’
এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোবাইল ফোন সেবার ওপর ১ শতাংশ সারসার্জ আরোপ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আরোপ হয় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক আরো বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। মোবাইল ফোন অপারেটররা বলে আসছেন তাঁদের মোট রাজস্ব আয়ের ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশই সরকারের কোষাগারে বিভিন্ন কর ও ফি বা মাসুল হিসেবে চলে যায়।
এদিকে মোবাইল ফোন ব্যবহারে খরচ বাড়লেও দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়নি। অর্থমন্ত্রী গতকাল তাঁর বাজেট বত্তৃদ্ধতায় বলেছেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল টেলিফোন সেট উৎপাদনের ওপর মূসক অব্যাহতি এবং সংযোজন খাতে ৫ শতাংশ হারে মূসক বিদ্যমান রয়েছে। এই অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হবে। দ্রুত বর্ধনশীল এ খাত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এই সুবিধা আরো এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করছি।’
মোবাইল ফোন অপারেটর রবি এক বিবৃতিতে বলেছে, টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর আরোপিত ২ শতাংশ ন্যূনতম আয়কর প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাহার না হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশেষ করে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে ডিজিটাল সেবা প্রদান এবং ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরিতে অপারেটরদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পরেও ২ শতাংশ ন্যূনতম করের বোঝা প্রত্যাহার না হওয়াটা আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। আমরা মনে করি, বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সুযোগ এখনো আছে এবং এ বিষয় একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সরকার নেবে।
যা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যান হবে বিশেষ করে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের বেলায় ।