ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর ডাক্তাররা বলেছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েই মারা গেছেন তিনি। ডাক্তারদের বরাত দিয়ে রোববার বেলা ১১ টায় যুগান্তরকে এ তথ্য জানান আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

তিনি বলেন, নমুনা পরীক্ষায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহর করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। তাকে এখন টুঙ্গিপাড়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেই দাফন কাফন করা হবে। ঢাকায় কোনো কর্মসূচি নেই।

এর আগে শনিবার রাতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে যান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি জানিয়েছিলেন, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর তার দাফন কাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব খন্দকার ইয়াসির আরেফীন এ তথ্য জানান।

৭৪ বছর বয়সী শেখ আবদুল্লাহ টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন।

শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বেইলি রোডের বাসায় প্রতিমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সিএমএইচে নেয়া হয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেইটে সাংবাদিকদের বলেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অসুস্থ বোধ করলে তাকে সিএমএইচে নেয়ার পথে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে যান। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শেখ আবদুল্লাহ ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ধার্মিক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শেখ মতিউর রহমান ও মা রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

শেখ আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগে ত্যাগী নেতা হিসেবেই সমধিক পরিচিত। রাজনীতিতে তার ত্যাগ বেশ আলোচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গীপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদীয় প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

শেখ মো. আবদুল্লাহ ১৯৬১ সালে মেট্রিক, ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬৬ সালে বি কম (অনার্স) ডিগ্রি নেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম কম এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রিও নেন শেখ আবদুল্লাহ।

শিক্ষা জীবন শেষে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও আইনজীবী হিসেবে গোপালগঞ্জ জজ কোর্ট ও ঢাকা জজ কোর্টে প্র্যাকটিস করেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন আবদুল্লাহ। খুলনার আযম খান কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত এই ভিপি ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

source : jugantor