দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন দাবি করা পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান অপরাধ ঢাকতে ঘুষ দিয়েছেন বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার সকালে রাজধানীর বকশি বাজারের কারা অধিদফতরের কারাকনভেনশন সেন্টারে দিনব্যাপি ‘উদ্ভাবনী মেলা ও শোকেসিং ২০১৯’ অনুষ্ঠানে এমনটি জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডিআইজি মিজান নিশ্চয়ই অপরাধ ঢাকতে ঘুষ দিয়েছেন। তার আগের অপরাধের বিচার চলছে। নতুন করে যদি ঘুষ দেওয়ার মতো অপরাধ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিআইজি মিজান ঘুষ কেন দিয়েছে এমন প্রশ্ন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয়ই তার কোনো দুর্বলতা আছে। সেই দুর্বলতা ঢাকতেই সে ঘুষ দিয়েছে। ঘুষ দেওয়া-নেওয়া দুটোই অপরাধ। এই অভিযোগও যাচাই-বাছাই করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর থেকে তিনি লাপাত্তা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম দেশেই আছেন। তার বাইরে পালিয়ে যাওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আছে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে প্রভাব খাটিয়ে গ্রেফতার এবং এক সংবাদ পাঠিকা ও এক নারী রিপোর্টারকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। পুলিশের নিয়োগ, বদলিতেও একসময় ভূমিকা রাখতেন তিনি। গ্রেফতার ও মামলা দিয়ে হয়রানি করে টাকা আদায়ের অভিযোগও আছে এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয় মিজানুর রহমানকে। একই সাথে তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসির। তবে অভিযোগ ওঠে, তদন্ত চলাকালেই প্রাপ্ত তথ্য অভিযুক্তের কাছে চালান করে দিয়ে আপসরফার মাধ্যমে দুই দফায় ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন তিনি। ডিআইজি মিজান নিজেই এমন অভিযোগ করেছেন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসিরের বিরুদ্ধে। এর পক্ষে প্রমাণ হিসেবে তিনি একটি অডিও ফাঁস করেন। যেখানে ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছিরের কথোপকথন রয়েছে।
তবে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এবং সেটাকে কেন্দ্র করে যে অডিও প্রকাশ হয়েছে তাকে সম্পূর্ণ বানোয়াট বলে অভিহিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসির। এটির সত্যতা যাচাই করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
তবে এ অভিযোগের পর কমিশন থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশে এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
অন্যদিকে ঘুষ দেওয়া এবং এ বিষয়ে কথাপকথনের অডিওর পক্ষে সব ধরণের তথ্য প্রমাণ আছে দাবি করে দুদককে সেটির সত্যতা যাচাই করতে বলেছেন অভিযোগকারী ডিআইজি মিজানুর রহমান।