মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা শফিউল বারী বাবুকে স্মরণ করে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন জাহিদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন জাহিদের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘বাবু ভাই চলে গেলেন। ছাত্রদলের রাজনীতির ইতিহাসে বাবু ভাই’র কাছাকাছি জনপ্রিয় ও সাংগঠনিক নেতা কখনও দেখি নি, ছিল বলেও বিশ্বাস করি না। সতীর্থ হিসেবে কলেজ জীবন থেকেই আমরা নাম জানতাম ন্যাটা বাবু হিসেবে। ছাত্রদলের ভরা যৌবনে ঢাকা কলেজ থেকে যে ব্যাচটি ক্যাম্পাসে ৯০-৯১ সেশনে আসলো, তারাই ক্যাম্পাস ডোমিনেট করেছে দীর্ঘদিন। জুয়েল, নয়ন, শত, মুকুল, নাহিদ, রিয়াজ, কাজল, ক্যাপ সোহেল, কল্লোল, শাহরিয়ার, বিপ্লব, হুমায়ুন, অনুপ, জসিম, বিটু, ফরিদ, মামুন সবাই ঢাকা কলেজ’ ৮৯; এর বাইরে আলীম, কুদ্দুস, মাহমুদ, ফারুক (সবার নামের পরে আর ‘ভাই’ যুক্ত করলাম না, কত নাম ভুলে গেছি)….বিশাল একটা ব্যাচ যে ব্যাচটা বাবু ভাইর হাতে গড়া, যার সকল সদস্যই বাবু ভাইর জন্য বুলেটের বিপরীতে বুক পেতে দিতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। এই গ্রুপটির ওপর দাঁড়িয়েই বাড়ন্ত হয়েছিল ইলিয়াস গ্রুপ।
আমি যেহেতু ছাত্রলীগ করতাম তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকেই উদ্বাস্তু, জহু-জগন্নাথ কিংবা বুয়েট-মেডিকেলের হলগুলোতেই থাকতাম, একেবারেই ভাসমান জীবন। আর বাবু ভাইরাও সরকারী দল হয়েও উদ্বাস্তু। ৯০’র আন্দোলনে অভিগ্রুপ নিশ্চিহ্ন হলে ইলিয়াস গ্রুপ উত্তরপাড়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল কিন্তু অন্তঃকোন্দলে ধরে রাখতে পারলো না। মামুন-মাহমুদ মার্ডারের পর থেকে তারা শহিদুল্লাহ-এফএইচ হলে আশ্রিত। নয়ন দা’র সাথে আমার ঢাকা কলেজের দক্ষিণ ছাত্রবাস থেকেই ঘনিষ্ঠতা, যার কারণে এ গ্রুপের সবাইকেই কম-বেশি চিনতাম, হয়তো আমাকে পছন্দও করতেন সবাই। কিন্তু বাবু ভাই’র সাথে তখনও আলাপ হয় নি।
’৯৩ সালে ১৫ আগস্ট আমি গ্রেফতার হলে নাইনটি সেলে গিয়ে পেলাম বাবু ভাইকে। খুবই আগ্রহ ছিল তাকে নিয়ে, কি এমন ছাত্রনেতা যার জন্য জীবনবাজি রাখতে রাজি অসংখ্য ছাত্রদলের সাহসী কর্মী! এই গ্রুপটার প্রায় সবাইকেই যেহেতু কম-বেশি চিনি, তাই জানতাম তারাও প্রচলিত পেশী নির্ভর রাজনীতির চর্চা করলেও অভিগ্রুপের মতো চাঁদাবাজি বা টেন্ডারবাজি করে খুব টাকা-পয়সা কামানোর সুযোগ পেয়েছে বিধায় ন্যাটা বাবুর নেতৃত্বে আস্থাশীল- তেমন একদমই না। আমার জেলে কাটানো ৪৯ দিন প্রতিদিনই তাকে একটু একটু করে চিনেছি। খুবই স্বল্পভাষী, ধী-শক্তিমান, সামাজিক দক্ষতাসম্পন্ন একজন ছাত্ররাজনীতিবিদ, সারা দিন বিভিন্ন বিষয় নিয়েই আড্ডা দিতাম। জামাত-শিবির বিরোধী মনোভবে আমাদের মানসিক ঐক্য ছিল কিন্তু সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতায় তা তিনি প্রকাশ্যে বলতে পারতেন না। আমি একটু খোঁচাখুঁচি করলেও তার সাথে আদর্শিক কোনো বিষয় নিয়ে আলাপ তুললে তিনি সযত্নে এড়িয়ে যেতেন।
এরকম একজন তরুণ সংগঠকের অকাল মৃত্যু সামগ্রিক রাজনীতির জন্য সুখকর নয়। বিদায় ব্রাদার- ঐ সুমন্যা বলে অধিকার নিয়ে আর কেউ ডাক দিবে না পিছন থেকে। সদ্য এতিম হওয়া আপনার ২টি শিশু সন্তানের জন্য শুভকামনা চিরন্তন। আমি বিশ্বাস করি ওদের চাচ্চুরা বাবার মতোই আগলে রাখবে ওদের বাকিটা পথ।’