শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুরের চাঞ্চল্যকর কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলায় জাজিরার মেয়রপুত্র মাসুদ বেপারীর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস এ আদেশ দেন।
মামলা দায়েরের ৮ দিনের মাথায় গত ৮ জুলাই একই আদালতের একজন ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আসামি মাসুদ বেপারীকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিলেন। মাসুদ বেপারীকে জামিন দেওয়ার পর ফুঁসে উঠে শরীয়তপুরসহ সারা দেশের লোকজন। ১০ জুলাই লোকজন শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। আজ ১১ জুলাই মাসুদ আদালতে হাজির হলে আদালত তাঁর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ঘটনার শিকার ওই কলেজছাত্রী ও তাঁর মা-বাবা।
গত ২৯ জুন বিকেলে শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. ইউনুছ বেপারীর বিবাহিত ছেলে মাসুদ বেপারী তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হতদরিদ্র প্রান্তিক কৃষকের এক কলেজপড়ুয়া মেয়েকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন। নিজের বুদ্ধি আর সাহসিকতার জোরে মেয়েটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। রাত ১০টার দিকে বিষয়টি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পারে। তারা রাত আড়াইটার দিকে মাসুদ বেপারীকে আটক করে। পরদিন ৩০ জুন দুপুরে ওই মেয়ে ও তাঁর বাবা জাজিরা থানায় হাজির হয়ে ধর্ষণ মামলা করেন। ১ জুলাই মাসুদকে আদালতের মাধ্যমে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
৭ জুলাই ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাসুদের জামিন প্রার্থনা করেন তাঁর আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষ মাসুদের জামিনের বিরোধীতা করে সাত দিনের রিমান্ড দাবি করেন। কিন্তু আদালত মাসুদের জামিন নামঞ্জুর করেন এবং রিমান্ড আবেদনও নামঞ্জুর করেন। ৮ জুলাই মাসুদ বেপারীর আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পুনরায় জামিন আবেদন করলে বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ) মরিয়ম মুন মুঞ্জুরী আসামি মাসুদের জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।
মাসুদ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবারকে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিল মেয়েটির পরিবার। এরপর ১০ জুলাই দুপুরে মেয়েটি ও তাঁর বাবা নিরাপত্তা চেয়ে জাজিরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
মাসুদের জামিন বাতিল হওয়ার পর ঘটনার শিকার ওই মেয়েটির বাবা-মা জানান, কুদ্দুছ মৃধা নামের এক ব্যক্তি অপরাপর আরো আট-দশজন ব্যক্তিকে নিয়ে ৮ জুলাই রাতে আমার বাড়িতে এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে। আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। আমি তাদের ভয়ে আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরের ভেতরে পালিয়ে থাকি। পুনরায় ১০ জুলাই কুদ্দুছ মৃধা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমাদের মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়। ফলে আমরা জাজিরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। আজ মাসুদের জামিন বাতিল হওয়ায় আমরা আদালতের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং মাসুদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
শরীয়তপুর জেলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মির্জা হজরত আলী বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় জাজিরা পৌরসভার মেয়রের ছেলে মাসুদ বেপারীকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার আদালতে তাঁর হাজিরা দেওয়ার ধার্য তারিখ ছিল। মাসুদ বেপারী আদালতে হাজিরা দিতে এলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস তাঁর জামিন বাতিল করে তাঁকে আবারো জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।