মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
আমরা সবাই সচ্ছল হতে চাই। সফল হতে চাই। তা হতে গিয়ে আমরা নিজেকেই হারিয়ে ফেলি। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে দুনিয়া অর্জনের মিথ্যা প্রতিযোগিতায় আমরা জীবন শেষ করে দিই। অথচ মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা কেবল আমার ইবাদত করবে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)
জীবনের পাগলা ঘোড়া আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, আমরা আল্লাহর দেওয়া নির্দেশনা ভুলে গিয়ে নিজেদের মতো করে সফল হতে চাই। তা করতে গিয়ে বরাবরই শয়তানের জালে আটকা পড়ি। ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি না। হতাশার মেঘগুলো আমাদের চারপাশ অন্ধকার করে দেয়। এর থেকে উত্তরণের পথ আল্লাহর কাছে ফিরে আসা। তাঁর ইবাদতে মগ্ন হয়ে যাওয়া। তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ তিনি ছাড়া আর কেউ হতাশা দূর করতে পারবে না। সফলতা এনে দিতে পারবে না।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহাপবিত্র আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর হতাশা দিয়ে পূর্ণ করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৭)
অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করো, আমি তোমার অন্তর ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করব না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬৬)
কারণ যারা মহান আল্লাহর হুকুম অমান্য করে দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়, মহান আল্লাহ তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না। তাদের আত্মিক শান্তি উধাও হয়ে যায়। তারা ব্যর্থতার সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে এবং ধ্বংস হয়ে যায়। প্রিয় নবী (সা.) তাঁর উম্মতদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং এই মহাবিপদ থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দিয়েছেন।
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার সব চিন্তাকে একই চিন্তায় অর্থাৎ আখিরাতের চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে, সে যেকোনো উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫৭)
আমাদের উচিত দুনিয়া অর্জনের পেছনে জীবনটা নষ্ট না করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। পরকালকে প্রাধান্য দেওয়া এবং পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। তবেই আমাদের সব হতাশা দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ফলে আমাদের জীবনে স্থিরতা ফিরে আসবে এবং উভয় জাহানের সফলতা অর্জন হবে।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্র করে সুসংযত করে দেবেন, তখন তার কাছে দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দেবে। আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির গরিবি ও অভাব-অনটন দুই চোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়ায় সে এর চেয়ে বেশি পাবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬৫)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন। দুনিয়ার মরীচিকার মোহ ত্যাগ করে পরকালকে প্রাধান্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন।