ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে আটক করা নিয়ে গতকাল সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত নাটক করেছে পুলিশ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আটক করার দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে ছেড়ে দিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে আবার তুলে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পরে রাত ১টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী গত রবিবার রাতে রাজধানীর লালবাগ থানায় নুরুল হক নুরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এটিকে ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে গতকাল টিএসসিতে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে নুরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় শাহবাগ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গোলযোগ হয়। এ সময় সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ও পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই মিছিল থেকে নুরসহ সংগঠনটির সাতজনকে আটক করে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) ওয়ালিদ হোসেন রাত পৌনে ৯টার দিকে কালের কণ্ঠকে জানান, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং পুলিশকে মারধর করার অভিযোগে তাঁদের আটক করা হয়েছে। তবে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নুরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখা যায়।
রাত ১১টা ৩৫ মিনিটের দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে নুর ও তাঁর সংগঠনের একজনকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি মেডিক্যালের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় নুরের কর্মী-সমর্থকদের বাধার মুখে পড়ে। এ বিষয়ে রমনা ডিভিশনের ডিসি (ডিবি) এইচ এম আজিমুল হক জানান, আগে থেকেই নুরের অ্যাজমার একটু সমস্যা ছিল। এ জন্য তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, নুরসহ সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
রাত ১টার দিকে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, নুরসহ আটক সাতজনকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরে নুরসহ আটক অন্যদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর আগে রাত ১০টার দিকে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, আটক করে ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নুর অসুস্থ বোধ করায় মুচলেকা নিয়ে তাঁকেসহ অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নুরকে আটক করা হয়নি। অনুমতি ছাড়া মিছিল করায় তাকে নিয়ে এসে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
শাহবাগে ধাওয়াধাওয়ি : ধর্ষণের অভিযোগে মামলার প্রতিবাদে গত রাত ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসংলগ্ন রাজু ভাস্কর্য়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সমাবেশে বক্তারা এই মামলাকে মিথ্যা, হয়রানি ও যড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
মামলাটি উদ্দেশ্যমূলক উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘যিনি মামলা করেছেন, তাঁর সঙ্গে আমার কোনো দিন দেখা হয়নি। তবে দুই মাস আগে আমাকে ফোন দিয়ে তিনি সহযোগিতা চেয়ে বলেছিলেন যে কোনো এক ছেলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সে জন্য আমাকে ভূমিকা রাখতে বলা হয়।’
মামলায় মূল অভিযুক্ত হাসান আল মামুন বলেন, ‘এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আমরা প্রতিবাদ জানাব।’
সমাবেশ শেষে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়ে শাহবাগ থানার কাছে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষে ধাওয়াধাওয়ির ঘটনায় পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ও পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়। পরিষদের বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ধর্ষণের মামলা : লালবাগ থানায় দায়ের হওয়া ধর্ষণ মামলার এজাহারে বলা হয়, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি দুপুর ১টার দিকে ওই ছাত্রীকে মামুন লালবাগের নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ রোডে তাঁর বাসায় যেতে বলেন। সেখানে গেলে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর মামুনকে বিয়ের কথা বললে তিনি টালবাহানা শুরু করেন।
মামলার বাদী ওই ছাত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে ২০ জুন নুরের কাছে অভিযোগ করেন তিনি। নুর মীমাংসার আশ্বাস দিলেও পরে অবস্থান পাল্টে তাঁকে ‘বাড়াবাড়ি করতে’ নিষেধ করেন। তাই গত রবিবার রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ছয় নেতার নামে ধর্ষণের মামলা করেন তিনি। মামলায় নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে আর প্রধান আসামি করা হয়েছে হাসান আল মামুনকে, যিনি ওই পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন। মামলার বাকি আসামিরা হলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান ও সাইফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি নাজমুল হুদা এবং কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল্লাহ হিল বাকি।