মুফতি সাইফুল ইসলাম
ইসলামে অহংকার কঠোরভাবে দমন করতে বলা হয়েছে। কারণ এটি ঈমানের জন্য হুমকিস্বরূপ ও নিজের ভুলত্রুটি লালন করার অশুভ প্রয়াস সৃষ্টি করে। অহংকারের কারণে দুনিয়া ও আখিরাতে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। …অহংকার হলো, সত্যকে গোপন করা এবং মানুষকে নিকৃষ্ট বলে জানা। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৯৯)
এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায় অহংকার কতটা ভয়াবহ জিনিস। এটি মূলত আত্মার ব্যাধি। যে ব্যাধি মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। এই শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানেই ভোগ করতে হয়।
দুনিয়াতে অহংকারীর শাস্তি
১. একজন অহংকারীকে মানুষ তার চাহিদার বিপরীত দান করে। সে চায় সম্মান, কিন্তু মানুষ তাকে ঘৃণা করে।
২. উপদেশ গ্রহণ করা ও আল্লাহর নিদর্শনসমূহ থেকে নসিহত অর্জন করা হতে বঞ্চিত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা অন্যায়ভাবে জমিনে অহংকার করে আমার আয়াতসমূহ থেকে তাদের আমি অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৪৬)
৩. অহংকারীদের থেকে নিয়মতসমূহ ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
পরকালের জীবনে অহংকারের শাস্তি
অহংকারী ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের সঙ্গে ধ্বংস হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তিকে কোনোরূপ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না (সরাসরি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে)।
১. যে ব্যক্তি আল্লাহর চাদর নিয়ে টানাহেঁচড়া করে। আর আল্লাহর চাদর হলো অহংকার এবং তাঁর পরিধেয় হচ্ছে ইজ্জত।
২. যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুমের মধ্যে সন্দেহ পোষণ করে।
৩. যে ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৯৩)। অহংকারীরা কিয়ামতের দিবসে রাসুল (সা.)-এর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত ও অবস্থানের দিক দিয়ে অনেক দূরে থাকবে। অহংকারীরা আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে, যে অবস্থায় আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত।
অহংকার থেকে বাঁচার উপায়
অহংকার এমন একটি কবিরা গুনাহ, যা মানুষকে ধ্বংস করে দেয় এবং একজন মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত নষ্ট করে দেয়। এ কারণেই মারাত্মক এ ব্যাধি থেকে বাঁচতে হবে। এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো—
১. অন্তর থেকে অহংকারের মূলোৎপাটন করা। যখন আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্ব সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করবে তখন তার মধ্যে বিনয় ও নম্রতা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।
২. অহংকারের বস্তু নিয়ে চিন্তা করা যে এগুলো আদৌ কি আমার নিজের যোগ্যতা বলে অর্জিত?
৩. দোয়া করা ও আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। এটি অহংকার থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ।
৪. বিনয় অবলম্বন করা।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, গুনাহের মৌলিক উপাদান তিনটি—এক. অহংকার, দুই. লোভ, তিন. হিংসা-বিদ্বেষ। যে ব্যক্তি এই তিন অপরাধ থেকে মুক্ত থাকবে সে যাবতীয় অন্যায়-অপরাধ থেকে বেঁচে থাকবে। কুফরির উৎপত্তি অহংকার থেকে আর গুনাহের উৎপত্তি লোভ থেকে এবং অন্যায়-অনাচার ও জুলুমের উৎপত্তি হিংসা-বিদ্বেষ থেকে।
আল্লাহ আমাদের অহংকারমুক্ত জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও মুহাদ্দিস