অবশেষে ইলিশ ধরার অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা) ভেঙেছে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গতকাল বুধবার (৪ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ফের জাল নিয়ে নদীর জলে নেমেছেন জেলেরা।
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে পদ্মা, মেঘনাসহ উপকূলীয় ১৯ জেলার নদ-নদীতে ইলিশ ধরার ওপর গত ১৪ অক্টোবর থেকে সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। এ সময়টাতে ইলিশ পরিবহন, বিক্রি ও মজুদ নিষিদ্ধ ছিল। সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলেরা নিষেধাজ্ঞাকালীন ২০ কেজি করে চাল পেলেও এ কয়টা দিন পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনে কেটেছে জেলেদের সংসার।
২২ দিনের অলস সময় কাটিয়ে ইলিশ ধরতে জাল আর ট্রলার নিয়ে গতকাল মধ্যরাতের পরই সাগরে ছুটেছেন অনেক জেলে। আর স্থানীয় জেলেরাও নদ-নদীতে ইলিশ শিকারে নেমে পড়েন। জেলেরা আশা করছেন, ২২ দিন বন্ধ থাকায় এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। ফলে তাঁরা ক্ষতি পুষিয়ে ধারদেনা পরিশোধ করতে পারবেন।
এদিকে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর আজ বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে গভীর সমুদ্রে গমনের অনুমতি দিলেও লালবোট ইলিশ শিকারে নেমেছে বুধবার মধ্যরাতেই। জানা গেছে, চট্টগ্রামের হালিশহর, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা, বাঁশখালী উপকূলে প্রায় তিন হাজার ৪০০টি লালবোট সমুদ্র উপকূলে মাছ শিকার করে।
হালিশহরের রাণী রাসমণি ঘাট এলাকার জেলে কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘আমাদের জন্য এই ২২ দিন ঘরে বসে থাকা ছিল খুব কষ্টের। কারণ জলই জেলেদের প্রাণ। আবার আমরা মাছ শিকারে যাব, ভাবতেই ভালো লাগছে।’
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া এলাকার জেলে মন্টু আকন জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাতে জাল আর ট্রলার নিয়ে দ্রুত সাগরে ও নদীতে যেতে পারেন সে জন্য জেলেরা আগে ভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ‘ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেকার জেলেদের ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এই মৌসুমে আমরা ২০ হাজার জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি।’
ভোলা সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, এ বছর জেলেদের সচেতনতা ও ভিজিএফএর চাল ঠিক সময়ে বিতরণ করায় মা ইলিশ রক্ষার অভিযান প্রায় শতভাগ সফল হয়েছে।
বরগুনার আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘উপকূলের জেলেরা নিজেরাই এখন অনেকটা সচেতন। আমরা দিন-রাত মা ইলিশ রক্ষায় কাজ করেছি। তার পরও নিষেধাজ্ঞা না মেনে অনেক জেলে ইলিশ শিকারে গিয়ে কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা গুনেছেন।’