বলের দখল নয়, বার্সেলোনাকে হারাতে গতিময় ফুটবলের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন কাদিস কোচ, মাঠে তার দেখা মিলল না তেমন। তবে চমক জাগানিয়া জয় ঠিকই তুলে নিয়েছে ১৫ বছর পর লা লিগায় ফেরা দলটি। শক্তি-সামর্থ্যে যোজন যোজন এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের দুটি ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঘরের মাঠে আসরে প্রথম জয় পেয়েছে কাদিস।
প্রতিপক্ষের মাঠে শনিবার রাতে লিগ ম্যাচে ২-১ গোলে হেরেছে রোনাল্ড কুমানের দল। আলভারো হিমেনেসের গোলে শুরুতে কাদিস এগিয়ে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী গোলে সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। সফরকারীদের আরেকটি ভুলের সুযোগে জয়সূচক গোলটি করেন আলভারো নেগ্রেদো।
গত ২১ নভেম্বর লিগে আতলেতিকো মাদ্রিদের মাঠে হারের পর যেন নিজেদের ফিরে পেয়েছিল বার্সেলোনা। সব প্রতিযোগিতা মিলে টানা তিনটি ম্যাচ জিতেছিল তারা; এই সময়ে গোল করেছিল ১১টি, বিপরীতে হজম করেনি একটিও।
তবে লিগে অ্যাওয়ে ম্যাচে বেশ ভুগছিল দলটি। সেই হতাশা এবার আরও বাড়ল। এবারের লিগে ১০ ম্যাচে এই নিয়ে চারটিতে হারল তারা, যার তিনটিই প্রতিপক্ষের মাঠে।
আসরে কাদিসের এটি পঞ্চম জয়, আগের চারটি ছিল অ্যাওয়ে ম্যাচে। ১৯৯১ সালের পর প্রথম বার্সেলোনাকে হারাল তারা।
ম্যাচের শুরুতেই ধাক্কা খায় বার্সেলোনা। অষ্টম মিনিটে কর্নারে ফালোর হেড ফ্লিকে ছোট ডি-বক্সে আসা বল ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের জালের দিকেই হেড করে বসেন তরুণ ডিফেন্ডার অস্কার মিনগেসা। গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন ঝাঁপিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন, বলে হাতও লাগিয়েছিলেন; কিন্তু গোললাইন থেকে টোকা দিয়ে বাকি কাজ সারেন হিমেনেস।
সপ্তদশ মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো বার্সেলোনা। মেসির পাস পেয়ে মার্টিন ব্রাথওয়েটের কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক। আট মিনিট পর মেসির ফ্রি-কিক লাফিয়ে ঠেকান আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক লোদেসমা।
প্রথমার্ধের বাকি সময়েও একইভাবে প্রায় ৮০ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষকে ব্যস্ত রাখে বার্সেলোনা। ঘর সামলাতে ব্যতিব্যস্ত কাদিসের সব খেলোয়াড় অধিকাংশ সময়ই ছিল নিজেদের সীমানায়।
দ্বিতীয়ার্ধেও একইভাবে চলতে থাকা ম্যাচের ৫৭তম মিনিটে সৌভাগ্যসূচক গোলে সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। ডি-বক্সে মেসির পাস পেয়ে বাঁ দিক থেকে জর্দি আলবার শট ডিফেন্ডার পেদ্রো আলকালার পায়ে লেগে দিক পাল্টে কাছের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ায়।
সমতায় ফিরে বার্সেলোনা ঘুরে দাঁড়াবে কী, উল্টো ৬৩তম মিনিটে আরেক ভুলে আবারও পিছিয়ে পড়ে তারা। নিজেদের ডি-বক্সে সতীর্থ ক্লেমোঁ লংলের উদ্দেশে থ্রোয়িং করেছিলেন আলবা, কিন্তু বল পায়ে নিতে পারেননি ফরাসি ডিফেন্ডার। দলকে বিপদমুক্ত করতে ছুটে আসেন টের স্টেগেন, তিনিও পারেননি, ঠান্ডা মাথায় প্রথম ছোঁয়ায় বল কেড়ে নিয়ে দ্বিতীয় ছোঁয়ায় ঠিকানা খুঁজে নেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড নেগ্রেদো।
ম্যাচে ফিরতে শেষ ১৫ মিনিটে মরিয়া হয়ে আক্রমণ করতে থাকে বার্সেলোনা। এবং আগের মতোই রক্ষণ সামলাচ্ছিল কাদিস। নির্ধারিত সময় শেষের আগের মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন গ্রিজমান, ফরাসি এই ফরোয়ার্ডের শট ক্ষিপ্রতায় পা বাড়িয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক।
এই সময়েই দুর্দান্ত দুটি প্রতি-আক্রমণে নিশ্চিত সুযোগ পেয়েছিল কাদিস। যোগ করা সময়ে টের স্টেগেনকে একা পেয়েও উড়িয়ে মেরে হতাশ করেন নেগ্রেদো। তবে রক্ষণ জমাট রেখে ম্যাচ শেষে উল্লাসে মেতে ওঠে কাদিস।
২৯ বছর পর বার্সেলোনার বিপক্ষে জয়ের আনন্দ। গত অক্টোবরে রিয়াল মাদ্রিদকে তাদেরই মাঠে হারানোর পর এবার প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ীদের বিপক্ষে জয়। লিগ টেবিলে মেসিদের টপকে যাওয়ার উচ্ছ্বাস, সব মিলে কাদিসের জয়োল্লাস ছিল বাঁধভাঙা।
১২ ম্যাচে পাঁচ জয় ও তিন ড্রয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠেছে কাদিস। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে আছে দুই ম্যাচ কম খেলা বার্সেলোনা।
রিয়াল ভাইয়াদলিদকে ২-০ গোলে হারানো আতলেতিকো মাদ্রিদ ১০ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠেছে। এক ম্যাচ বেশি খেলা রিয়াল সোসিয়েদাদের পয়েন্ট ২৪।
আরেক ম্যাচে সেভিয়ার মাঠে ১-০ গোলে জেতা রিয়াল মাদ্রিদ ১১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে আছে তৃতীয় স্থানে। সমান পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে ভিয়ারিয়াল।