মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
আনন্দ ও খুশির খবরে মানুষ পুলকিত হয়। নানাভাবে এই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ইসলামের দৃষ্টিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। মহানবী (সা.) একবার মুআজ (রা.)-কে বলেছেন, ‘হে মুআজ, আমি তোমাকে বলছি, কখনো নামাজের পরে এ দোয়া পড়তে ভুল করো না—‘হে আল্লাহ, আপনার স্মরণ, আপনার কৃতজ্ঞতা আদায় ও সুন্দর করে আপনার ইবাদত করতে আপনি আমাকে সাহায্য করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২১১৯; আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২৪)
আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী প্রত্যেক ঈমানদার মনে করেন, ভালো-মন্দ, সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা, সুখ-দুঃখ—সব কিছুর মালিক মহান আল্লাহ। তাঁর ইচ্ছাতেই কখনো কখনো পথের ফকির হয়ে যায় প্রাসাদের মালিক। কোনো নিয়ামত পেলে এ বিশ্বাসের ওপরই সে ভর করে। সে উচ্চারণ করে—‘আলহামদু লিল্লাহ’। অর্থাৎ কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এসব নিয়ামত তাঁরই দান। এটা খাঁটি ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন, ‘তোমার পরে আমি এক উম্মত পাঠাব, প্রত্যাশিত কোনো কিছু যদি তাদের অর্জিত হয়, তাহলে তারা আল্লাহর প্রশংসা করবে ও তাঁর শুকরিয়া আদায় করবে। আর যদি অপ্রত্যাশিত কোনো কিছু তাদের পেয়ে বসে, তাহলে তারা পুণ্যের আশায় ধৈর্যধারণ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৭৫৪৫)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঈমানদারের জীবনাচার কত আশ্চর্য ধরনের! তার সব কিছুই কল্যাণকর। আর এটা তো শুধু ঈমানদারের ক্ষেত্রেই হতে পারে। সচ্ছলতায় সে শুকরিয়া আদায় করে। তখন সেটা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ নেমে আসে, তাহলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)
কোনো অনুগ্রহকারীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য অন্যতম উপায় হলো, অনুগ্রহকারীর ইচ্ছা ও চাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া ও তাঁর আনুগত্য প্রদর্শন করা। একইভাবে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের অন্যতম পন্থা হলো তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করা।
তবে যেকোনো খুশির খবরে মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ প্রকাশ করায় কোনো দোষ নেই। (আল-ফাতাওয়াস সুলাসিয়া ১/৫৬)
এ ছাড়া খুশির কারণে শুকরিয়াস্বরূপ আল্লাহর পথে সদকা করার একাধিক হাদিস পাওয়া যায়। কাব বিন মালেক (রা.) তাঁর তাওবা কবুলের সংবাদ পেয়ে সিজদা করেছিলেন ও তাঁর সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় রাসুল (সা.)-এর খেদমতে পেশ করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৪১৮)