সিলেটে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন থেকে করোনা পরীক্ষার ফলাফল আসার আগেই বাড়ি চলে যাওয়ার দায়ে যুক্তরাজ্যফেরত দুই প্রবাসীকে এক সপ্তাহের জেল ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) রাত ১০টার দিকে সিলেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। পাশাপাশি তাদেরকে সাত দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
কারাদণ্ড প্রদানের পর তাদেরকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই দুই প্রবাসী হোটেল স্টার প্যাসিফিকে ছিলেন। সাজাপ্রাপ্ত লন্ডন প্রবাসীরা হলেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চানপুর গ্রামের আব্দুল রউফের ছেলে আলম হাসান রউফ (৩৬) ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গোয়াসপুর গ্রামের মৃত আলতাব আলীর ছেলে মো. আবদুল নূর (৪২)। তিনি নগরের পাহাড়িকা আবাসিক এলাকার জিয়া উদ্দিন রোডের বাসিন্দা। তারা দুজনই ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি।
রাত পৌনে ১২টায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক ক্ষুদে বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এসএমপির গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়, গত ২২ মার্চ যুক্তরাজ্যের লন্ডন হতে আসা ১৪০ জন যাত্রীর মধ্যে মো. আব্দুন নূর এবং আলম হাসান রউফকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সাত দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য নগরের দরগাহ গেইটস্থ হোটেল স্টার প্যাসিফিকের যথাক্রমে ৭০৩ ও ৭০৪ নং রুমে রাখা হয়। গত ২৯ মার্চ সাত দিন কোয়ারেন্টিন অতিবাহিত হওয়ায় করোনা পরীক্ষার জন্য তারা নমুনা প্রদান করেন।
কিন্তু উক্ত ওই দুই ব্যক্তি কোয়ারেন্টিন নীতিমালা ভঙ্গ করে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় করোনা পরীক্ষার ফলাফল আসার পূর্বেই জোরপূর্বক হোটেল থেকে চলে যান। তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন ধরেননি। এরপর এই দুই প্রবাসী হোটেল স্টার প্যাসিফিকে সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে ফিরে আসেন। কোয়ারেন্টিন ভঙ্গ করে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনার খবর পেয়ে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হোটেল স্টার প্যাসিফিকে যান। পরে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেজবাহ উদ্দিন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮ এর ২৫(১)(খ) ধারায় প্রত্যেককে এক সপ্তাহ করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার টাকা অনাদায়ে আরো সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। রায় ঘোষণার পর দণ্ডিত দুই প্রবাসীকে রাতেই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে নগরের আম্বরখানাস্থ হোটেল ব্রিটেনিয়া থেকে একই পরিবারের নয় সদস্য কোয়ারেন্টিন থেকে পালিয়ে জকিগঞ্জস্থ তাদের গ্রামের বাড়ি চলে যান। পরে তাদেরকে ফোনে ডেকে এনে ওই পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক ছয় জনকে তিন হাজার টাকা করে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া নগরের লামাবাজারস্থ হোটেল লা ভিস্তায় কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় হোটেলের বলরুমে যুক্তরাজ্যফেরত এক যুবক বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এ নিয়ে সিলেটজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিন মানা নিয়েও দেখা দেয় নানা প্রশ্ন। ওই দুই আলোচিত ঘটনা নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই আবারও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন ভঙ্গের ঘটনা ঘটল।