দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায় সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনার পর আগামী ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় প্রথম ধাপের ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন স্থগিত করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে ওই দিন অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচন, ১১টি পৌরসভা এবং কয়েকটি উপজেলার উপনির্বাচনও স্থগিত করা হতে পারে।

ইসি গত সোমবার জরুরি বৈঠক করে এই বিষয়ে আগামীকাল ১ এপ্রিলের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিন ধার্য করেছে। তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগে নির্বাচন কমিশনারদের ব্যক্তিগত মত হচ্ছে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি যে অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে ১১ এপ্রিলের ওই সব নির্বাচন করা উচিত হবে না। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকেও বলা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন এসব নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিলে আমরা স্বাগত জানাব।

kalerkantho

এদিকে করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেই আজ বুধবার দেশের দুটি পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। পৌরসভা দুটি হচ্ছে যশোর সদর ও মাদারীপুরের কালকিনি। এ ছাড়া আজ ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় ৭ নম্বর ওয়ার্ড ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও পাবনার সুজানগর পৌরসভায়ও আজ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল, কিন্তু আদালতের নির্দেশে এই দুই পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলেন দুজন নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, করোনা সংক্রমণ যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত  নির্বাচন করা উচিত হবে না। কমিশন সভাতে আমি আমার এ মতের কথা জানাব।’

আরেক নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেন, ‘সরকার করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। করোনাভাইরাস কিভাবে ছড়াচ্ছে তা এখনো আমরা স্পষ্টভাবে জানি না। তবে জনসমাগম ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে জনস্বার্থ ও মানষের জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনায় দেশে যেভাবে মৃত্যু ও সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে সময়টি নির্বাচন উপযোগী নয়। নির্বাচনের সময় করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। এ সময় প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা দেখা যায় না। এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন যদি আগামী ১১ এপ্রিলের নির্বাচন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় সে সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাব।’ 

এদিকে গত সোমবার ইসির জরুরি বৈঠকের পর ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘৩১ মার্চে কয়েকটি নির্বাচন রয়েছে; এ নির্বাচনগুলো হবে। তবে ১১ এপ্রিল ইউপি, পৌর ও সংসদের উপনির্বাচন রয়েছে। এগুলোর সম্পর্কে ১ এপ্রিল সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।’

প্রসঙ্গত, প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে এরই মধ্যে বিনা ভোটে জয়ের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। ১৪৯ জন ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধি হয়ে গেছেন। এ ক্ষেত্রে গতবারের মতোই শীর্ষে রয়েছে বাগেরহাট। এ ধাপের ৩৭১টি ইউপির মধ্যে ৭৩টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। বাগেরহাট জেলাতেই ৪০টি ইউপিতে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বরিশাল জেলায় ১৪টি, পটুয়াখালীতে দুটি, পিরোজপুরে চারটি, ভোলায় সাতটি, গাজীপুরে দুটি ও চট্টগ্রামে চারটি ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ ঘটনা ঘটেছে। চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ৬৮ জন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে আটজন একইভাবে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন বা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন এক হাজার ৮০ জন। তাঁদের অনেককে ভয়ভীতি দেখিয়ে বা জোরপূর্বক নির্বাচন থেকে সরানোর অভিযোগ আছে। বর্তমানে ভোটের মাঠে রয়েছেন ১৯ হাজার ১৩৭ জন। বৈধ প্রার্থীদের মাঝে রিটার্নিং অফিসাররা গত ২৫ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ করেছেন এবং ওই দিন থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও ১১ এপ্রিল যে ১১টি পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তাতেও তিনটি পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দলের একক প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। পৌরসভাগুলো হলো কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও নোয়াখালীর কবিরহাট।

যে ৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, সেই ইউপিগুলো হলো পটুয়াখালী বাউফলের কালিশূরী, কালাইয়া, বরিশালের বাকেরগঞ্জের দুধল, উজিরপুরের শোলক, মুলাদীর মুলাদী, গৌরনদীর বাটাজোড়, খানজাপুর, বার্থি, চাদশী, মাহিলারা, নলচিড়া, বানারীপাড়ার বিশারকান্দি, ইলুহার, সালিয়াবাকপুর, বানারীপাড়া, উদয়কাঠি; পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার তেলিখালী, ঝালকাঠি সদরের কেওড়া, নলছিটির নাচনমহল, রাজাপুর গালুয়া, ভোলার বোরহানউদ্দিনের গঙ্গাপুর, চরফ্যাশনের চরমাদ্রাজ, চরকলমি, হাজারীগঞ্জ, এওয়াজপুর, জাহানপুর, খুলনা দাকোপের লাউডোবা, বাগেরহাটের ফকিরহাটের বেতাগা, পিলজংগ, ফকিরহাট, নলধা মৌভোগ, মোল্লাহাটের উদয়পুর, চুনখোলা, কোদালিয়া, আটজুড়ি, গাওলা, কুলিয়া, চিতলমারীর হিজলা, শিবপুর, চরবানিয়ারী, সন্তোষপুর, কচুয়ার গজালিয়া, গোপালপুর, রাড়ীপাড়া, বাধাল, রামপালের হুড়কা, মল্লিকের বেড়, বাঁশতলী, রামপাল, ভোজপাতিয়া, মোংলার চাঁদপাই, বুড়িরডাঙ্গা, চিলা, মিঠাখালী, সোনাইলতলা, সুন্দরবন, মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়ীয়া, শরণখোলার খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, সাউথখালী, সদরের বারুইপাড়া, বেমরতা, বিঞ্চুপুর, ডেমা, কাড়াপাড়া, খানপুর, রাখালগাছি; গাজীপুর কালীগঞ্জের তুমুলিয়া, মোক্তারপুর, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাউরিয়া, সারিকাইত, মগধরা ও হারামিয়া।