আস্তে আস্তে পুরো পৃথিবীটাই কেমন যেন ভার্চুয়াল জগতে পরিণত হচ্ছে। করোনার ভয়াবহ সংক্রমণে কোথাও সশীরের উপস্থিত হওয়াটাই ঝুঁকিপূর্ণ। সেই ঝুঁকি এড়িয়ে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের সমাপনীতে প্রধান অতিথি আ হ ম মুস্তফা কামাল ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে গেমসের সাফল্যের কথা বলে গেছেন। আর সাহসী হয়ে অলিম্পিকের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা সশরীরে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হাজির হয়ে মহামারির মধ্যেও মহা-আয়োজন সম্পন্নের স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, ‘কভিডের মধ্যে কোনো রকম অঘটন ছাড়াই আমরা বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস শেষ করতে পেরেছি। করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গেমস শেষ করেছি আমরা। বেশি কিছু রেকর্ড হয়েছে, কিছু নতুন অ্যাথলেট বেরিয়েছে, যাদের নিয়ে আমরা সামনে এগোনোর কাজ করত পারব। গেমস আয়োজনের আসল উদ্দেশ্যই হলো খেলোয়াড় বের করে আনা।’

kalerkantho

একদিকে স্বস্তি, আরেক দিকে নতুন অ্যাথলেটের পদচারণ—দুইয়ে মিলে এই মহা-আয়োজনকে সফল বলাই যায়। সঙ্গে আনসারও সফল গতবারের মতো। তারা এবার ১৩২টি সোনা ও ৮০টি রুপা ও ৫৭টি ব্রোঞ্জসহ মোট ২৬৯ পদক জিতে গেমসের সেরা দল হয়েছে। জেলা, বিভাগ, ক্লাব ও সার্ভিসেস দল মিলিয়ে এবার মোট ৩৬৩টি দল অংশ নিয়েছিল গেমসে। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী আনসারের পরেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান। ১১৫টি সোনা, ৯৯টি রুপা ও ৮৩টি ব্রোঞ্জ জিতেছে তারা। ২০১৩ সালের অষ্টম আসরেও আনসার সেরা হয়েছিল ১১১টি সোনা জিতে, সেবারও সেনাবাহিনী দ্বিতীয় স্থানে ছিল ৬৯ সোনা নিয়ে।

১১ দিনের এই গেমস শুরু হয়েছিল মহিলা ক্রিকেট দিয়ে। শেষ হয়েছে সেই ক্রিকেট দিয়ে, গতকাল পুরুষ ক্রিকেটের ফাইনালে বরিশালে জাহাঙ্গীরাবাদ সেন্ট্রাল জোন ৭ উইকেটে বরেন্দ্র নর্থ জোনকে হারিয়ে সোনা জিতেছে। ফাইনালে বরেন্দ্রর অধিনায়ক নাঈম আহমেদ (১২৮) ও জাহাঙ্গীরাবাদের জিসান আলম (১৬৯) সেঞ্চুরি করেছেন। শেষ স্বর্ণপদক নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৩৮০টি সোনা, ৩৭৫টি রুপা ও ৪৯২টি ব্রোঞ্জের লড়াই শেষ হয়েছে।

এবার ৩১টি ডিসিপ্লিনে সাড়ে পাঁচ হাজার অ্যাথলেট লড়েছেন পদকের জন্য। তাতে নতুন জাতীয় রেকর্ড হয়েছে ৬০টি, তবে ময়মনসিংহে ভারোত্তোলনে ২০টি ইভেন্টে ৩৪ রেকর্ড নিয়ে অনেকের মনে সংশয় আছে। ঢাকায় জাতীয় ভারোত্তোলন হলে তো এ রকম রেকর্ডের হিড়িক পড়ে না। এ ছাড়া ১৩টি সাইক্লিংয়ে, ১১টি সাঁতারে এবং আর্চারি ও অ্যাথলেটিকসে একটি করে নতুন রেকর্ড হয়েছে। আগেরবার ২০১৩ সালে হয়েছিল মোট ২২টি রেকর্ড। সঙ্গে বিভিন্ন ডিসিপ্লিন পেয়েছে অনেক নতুন খেলোয়াড়।

সুতরাং করোনার মধ্যে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসে প্রাপ্তি কম নয়। তবে করোনার কারণে গেমস স্বাভাবিক আকর্ষণ হারিয়েছিল। শেষটাও হয়েছে অনাড়ম্বরভাবে। বক্তৃতা আর গেমসের খণ্ডচিত্রের প্রদর্শনীতে উঠে আসে গেমসের পুরো আয়োজন। সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জীবনে ক্রীড়াযোগের অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনী হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে গেমসের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।  এরপর বিউগলের সুরে নিভে যায় গেমস মশাল। এর সঙ্গে সঙ্গেই ক্রীড়াঙ্গন আবার লকডাউনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।