এস এম রাজু আহমেদ :
রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসায় ফেলতেই জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ -৩ আসনের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি বলেন, সোনারগাঁ রয়্যাল রিসোর্ট-এ আল্লামা মামুনুল হক ইস্যুকে কেন্দ্র করে রয়্যাল রিসোর্ট, আওয়ামীলীগ কার্যালয়, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতির শাহ মোঃ সোহাগ রনির বাড়িঘর, গাড়িও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তান্ডবলীলা চালিয়েছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ ভাংচুরের তান্ডবের ঘটনাও ছিল। এ ছাড়াও স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লাঞ্ছিত করেছে হেফাজত কর্মীরা। এসব ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় পৃথক ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মধ্যে দুটি পুুলিশ বাদী ও বাকি ৪টি মামলার বাদী পাবলিক।
কিন্তু উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বাদী হয়ে তার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে হেফাজত নেতাকর্মীদের চেয়ে বেশির ভাগ আসামি জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা। একইভাবে উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাসির উদ্দীন আহাম্মেদ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন সেখানেও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের নাম জড়ানো হয়েছে যেখানে তাদের কোনো রকম সম্পৃক্ততা নেই। কেবল মাত্র আমার অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে দূবর্ল করার জন্যই তাদের এই পরিকল্পনা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম ইকবাল, সোনারগাঁ পৌরসভা সভাপতি এম এ জামান, ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মাস্টার, জেলা জাতীয় যুব সংহতির যুগ্ম আহবায়ক কাজী নাজমুল ইসলাম লিটু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছসেবক পার্টির সদস্য ও পিরোজপুর ইউপি সদস্য মোঃ আলমগীর, জেলা স্বেচ্ছসেবক পার্টির সদস্য পিরোজপুর ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান, আমরা করোনা স্বেচ্ছসেবী দলের সভাপতি সানা উল্লাহ বেপারি, হোসাইন হিরুসহ অর্ধ-শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনা সূত্রে জানা গেল- গত ৩ এপ্রিল শনিবার সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে আসেন কেন্দ্রীয় হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। ওই সময় তার সঙ্গে এক নারী ছিলেন যাকে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেছিলেন। ওইদিন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি সহ স্থানীয়রা মামুনুল হককে নারী সহ আটক করেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাটি সংবাদকর্মীরা ভিডিও ধারণ করেন। ওই খবরটি প্রচারিত হলে হেফাজতের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে রয়েল রিসোর্টে হামলা ভাংচুর চালিয়ে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেয়। এরপর তারা রফিকুল ইসলাম নান্নু ও সোহাগ রনির বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর চালায় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ ভাংচুর ও উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় ভাংচুর চালায়। পরবর্তীতে ৫ এপ্রিল স্থানীয় সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের বাড়িতেও হামলা ভাংচুর চালায়।
৯ এপ্রিল সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বাদী হয়ে ১২৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল হোসেনকে।
উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাসির উদ্দীন বাদী হয়ে ১১১জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা মামুনুল হককে প্রধান আসামি করা হয়।
একইভাবে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনির বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় সোহাগ রনির পিতা সাবেক মেম্বার শাহ জামাল তোতা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০০/৩০০জনকে আসামি করা হয়।
স্থানীয় সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের বাড়িঘর ভাংচুুর হামলার ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। তিনি মোজ্জামেল হক আরিফকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৮০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
তবে এর আগে ঘটনার একটি দিন সোনারগাঁও থানা পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এসআই ইয়াউর রহমান বাদী হয়ে মাওলানা মামুনুল হককে প্রধান আসামি করে এবং ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০/৩০০জনকে আসামি করা মামলা দায়ের করেন। মুলত রয়েল রিসোর্টের ঘটনায় তিনি এই মামলাটি দায়ের করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তান্ডবের ঘটনায় এসআই আরিফ হাওলাদার বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে এবং ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়।