এমন অভিজ্ঞতা তাঁদের কোনো দিন হয়নি, প্রায় ১৭ দিন একরকম ঘরবন্দি। সেই ‘বন্দিদশা’ থেকে গত পরশু মুক্তি পেয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান। আর গতকাল যোগ দিয়েছেন দলের সঙ্গে অনুশীলনে। তবে তাঁদের এই মাঠে ফেরার আনন্দে বাগড়া দিয়েছে প্রকৃতি। অঝোরে বৃষ্টির কারণে প্র্যাকটিসই যে হয়নি গতকাল। তবু খোলা বাতাসের অক্সিজেন তো নিতে পেরেছেন এতগুলো দিন পর।
কভিডের কারণে আচমকা আইপিএল স্থগিত ঘোষণার চার দিন আগে থেকেই হোটেলবন্দি ছিলেন সাকিব ও মুস্তাফিজ। এরপর বিশেষ বিমানে ঢাকায় ফিরে সাকিব সোজা ওঠেন গুলশানের ফোর পয়েন্টস শেরাটনে। আর সস্ত্রীক মুস্তাফিজের ঠিকানা হয় সোনারগাঁও হোটেল। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ভারতফেরতদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের বাধ্যবাধকতা কমাতে বিসিবির তরফ থেকে চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি দুই দিনের বেশি কমাতে রাজি হয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাই ১২ দিন ঢাকায় ফিরেও হোটেলেই থাকতে হয়েছে সাকিব ও মুস্তাফিজকে। এই সময়কালে অসংখ্যবার করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসায় এই ‘বিশেষ ছাড়’ পেয়েছেন তাঁরা।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘বায়ো-বাবলে থেকেই অনুশীলন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সাকিব ও মুস্তাফিজকে। এটা আগের নিয়মেই আছে। বিশেষ কোনো বিবেচনায় এটা করা হয়েছে। গতকাল (পরশু) হোটেল থেকে তাদের সরাসরি টিম বায়ো-বাবলে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
এই দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকায় সাকিব কিংবা মুস্তাফিজের নৈপুণ্যে ভাটা পড়ার কোনো আশঙ্কা দেখছেন না প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন, ‘আমার মনে হয় না এই বিরতি ওদের পারফরম্যান্সে কোনো প্রভাব ফেলবে। ওরা তো আইপিএলে ম্যাচ খেলেছে। এটা ঠিক যে লম্বা সময় ওরা কোয়ারেন্টিনে ছিল। কিন্তু ওদের যে অভিজ্ঞতা, তাতে ম্যাচ ফিটনেস ফিরে পেতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয় না।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচই দিবারাত্রির। তাই গতকাল কৃত্রিম আলোর নিচে অনুশীলনের পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশ দলের। কিন্তু বৃষ্টির কারণে অল্প সময় ওয়ার্ম আপ আর ফুটবল খেলেই ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়তে হয়েছে সবাইকে। আর বের হননি কেউ। তাতে প্রস্তুতির জন্য একটা দিন কম সময় পাচ্ছেন সাকিব ও মুস্তাফিজ। তবে ২১ তারিখ নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। সেটিতে ব্যাটে-বলে করার সুযোগ পাবেন সাকিব ও মুস্তাফিজ।
প্রতিপক্ষ বুঝে প্রস্তুতিতে বিশেষত্বও রেখেছে বাংলাদেশ দল। লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে ২১ মের প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য ডেকেছে নির্বাচক কমিটি। বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতিতেও দেখা যাবে তাঁকে। কারণ শ্রীলঙ্কা দলে লেগস্পিনারের যেন মেলা! ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, আকিলা ধনঞ্জয়া অফস্পিনের সঙ্গে লেগস্পিনও মিশিয়ে দেন আর লাকশান সান্দাকানের চায়নাম্যান—নিজেদের মাঠে স্পিনের নতুন পরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের। সে জন্যই বাইরে থেকে আমিনুলকে স্কোয়াডের সঙ্গে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আশা করছেন, ‘সাকিব আর মুস্তাফিজ প্রস্তুতি ম্যাচে খেলবে। এরপর কয়েক দিন স্কিল ট্রেনিং করবে। আশা করি, এই সেশনগুলোই ওদের (প্রস্তুতির) জন্য যথেষ্ট।’
উল্লেখ্য, আইপিএল স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর ৬ মে দিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে একই সঙ্গে ঢাকায় ফেরেন সাকিব ও মুস্তাফিজ। এবারের আইপিএলে পুরনো দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে অবশ্য তিনটির বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সাকিব। সেই তিন ম্যাচে ৩৮ রান করা সাকিব উইকেট নিয়েছেন দুটি। তবে রাজস্থান রয়ালসের সঙ্গে সবগুলো (সাতটি) ম্যাচই খেলেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৮ উইকেট নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রত্যাশাও পূরণ করেছেন এ বাঁহাতি পেসার।
এদিকে রবিবার ঢাকায় ফিরে কোয়ারেন্টিনে থাকা শ্রীলঙ্কা দলের সবাই করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হয়েছেন। তাই আজ ঢাকায় প্রথম প্রস্তুতিতে যোগ দিতে বাধা নেই সফরকারী দলের কারোর।